প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, একমাত্র সামাজিক ন্যায়বিচারই স্থায়ী শান্তি ও টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি রচনা করতে পারে।
গতকাল বুধবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় প্যালেস ডি নেশনসে ‘ওয়ার্ল্ড অব ওয়ার্ক সামিট-২০২৩’-এর পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশের দৃষ্টিকোণ থেকে দেওয়া পাঁচটি পরামর্শের মধ্যে প্রথমটিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই জোটকে একটি মান নির্ধারক বা দর-কষাকষির ফোরামের পরিবর্তে একটি পরামর্শমূলক বা অ্যাডভোকেসি প্ল্যাটফরম হিসেবে গড়ে তোলাই বাঞ্ছনীয় হবে।
দ্বিতীয়ত, বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সামাজিক ন্যায়বিচারকে এক আন্তর্জাতিক মহল দ্বারা অন্য মহলের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের বিষয়ে এই জোটকে সতর্ক থাকতে হবে।
তৃতীয়ত, এই জোটকে একটি নিয়মতান্ত্রিক বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ব্যবস্থার আওতায় সামাজিক ন্যায়বিচারকে একটি সংরক্ষণবাদী হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার না করে, বরং এর ব্যাপক প্রসারে ভূমিকা রাখার বিষয়ে প্রচারণা চালাতে হবে।
পরিশেষে আমাদের তরুণ সমাজকে সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রবক্তা হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এই জোটকে মনোযোগী হতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান শতাব্দীর বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিশ্বের জন্য আমাদের একটি নতুন সামাজিক চুক্তি তৈরি করতে হবে। এই সামাজিক চুক্তির মূল উদ্দেশ্য হবে, টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে সবার জন্য সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।
শিশুশ্রমের ন্যূনতম বয়স নির্ধারণে বাংলাদেশ সমপ্রতি আইএলও সনদ ১৩৮ অনুস্বাক্ষর করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার আটটি ঝুঁকিপূর্ণ খাতকে শিশু শ্রমমুক্ত ঘোষণা করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমি সুস্থ ও নিরাপদ আগামী প্রজন্মের স্বার্থে দেশকে শিশুশ্রমের অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে চাই।’
বিশ্বের শীর্ষ ১০০টি পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানার অর্ধেকেরও বেশি এখন বাংলাদেশে অবস্থিত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই অর্জনকে এগিয়ে নিতে আমরা একটি ‘গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড পলিসি’ প্রণয়ন করেছি এবং আমি আশা করি আমাদের আন্তর্জাতিক ক্রেতারা পণ্যের ন্যায্যমূল্য পরিশোধের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব এই ধরনের উদ্যোগকে উৎসাহিত করবেন।”
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার রূপকল্প-২০৪১-এর সঙ্গে সংগতি রেখে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার অঙ্গীকার করেছে। সে লক্ষ্যে গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য আগামী অর্থবছরের বাজেটে ৯.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিশেষ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মানবিক গতিশীলতা এবং সামগ্রিক কর্মপরিবেশের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমি দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য কাজ শুরু করেছি। আমার একমাত্র লক্ষ্য তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করা এবং বাংলাদেশকে একটি শান্তিপূর্ণ ও উন্নত সোনার বাংলায় পরিণত করা। আমি বাংলাদেশের মেহনতি মানুষের জন্য আমার জীবন উৎসর্গ করেছি।’
দক্ষতা বাড়াতে বাংলাদেশ-সুইজারল্যান্ড সমঝোতা স্মারক সই : বাংলাদেশে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও সুইজারল্যান্ড গতকাল একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছে। এর ফলে সুইজারল্যান্ডে বিশেষ করে মেডিক্যাল ও আইটি সেক্টর থেকে দক্ষ কর্মী রপ্তানির সুযোগ বাড়াবে।
জেনেভায় সুইস কনফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট অ্যালেন বেরেস্ট ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে বৈঠকের পর প্যালেস ডি নেশনসের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক কক্ষে এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সুইজারল্যান্ড ও বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি জুর্গ লাউবার এবং সুফিউর রহমান নিজ নিজ দেশের পক্ষে ‘জ্ঞান বিনিময় ও দক্ষতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন। প্রেসিডেন্ট অ্যালেন বেরেস্ট ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করেন।
পরে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর দক্ষতা প্রশিক্ষণ ও জ্ঞান বিনিময়ের অংশীদারির পথ প্রশস্ত করবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সুইজারল্যান্ডের কিছু বিশেষ প্রতিষ্ঠান, বিশেষত জুরিখে একটি ইনস্টিটিউট রয়েছে, যেটি প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের ওপর কাজ করে এবং এই ইনস্টিটিউটটি সাধারণত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করে।
বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য হচ্ছে—গবেষণা ও উদ্ভাবনে সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য জুরিখের এই ইনস্টিটিউটের সঙ্গে বাংলাদেশের নতুন বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংযুক্ত করা।
দক্ষতা বৃদ্ধির বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে, কারণ তারা (সুইজারল্যান্ড) বাংলাদেশ থেকে দক্ষ জনশক্তি, বিশেষ করে মেডিক্যাল ও আইটি খাত থেকে জনশক্তি আমদানি করতে চায়।
সেই লক্ষ্যে সুইজারল্যান্ড বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানের অধীনে বাংলাদেশে প্রাথমিক দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দেবে ও পরবর্তী সময়ে এই দক্ষ জনশক্তি সে দেশে নিয়োগ দেবে।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় প্যালেস ডি নেশনসে গতকাল বৈঠকের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে করমর্দন করেন সুইস কনফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট অ্যালেন বেরেস্ট।