কয়েক দিন ধরেই প্রচন্ড গরম চলছে বাংলাদেশের সব অঞ্চলেই। বৃহস্পতিবার আবহাওয়া অধিদপ্তর সর্বোচ্চ ৪১ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে দিনাজপুরে। এ ছাড়া দুই দিন আগে থেকেই তাপপ্রবাহের সতর্কতা দিয়ে রেখেছে আবহাওয়া অফিস, যা অব্যাহত রাখার কথা বলা হয়েছে পূর্বাভাসে। এই মুহূর্তে তাপপ্রবাহ সবচেয়ে বেশি রাজধানী ঢাকা আর উত্তরবঙ্গের দিকে। সে তুলনায় তাপমাত্রা কিছুটা কম চট্টগ্রাম অঞ্চলে।
‘আর্লি মর্নিং অফিস হতে পারে, সকাল থেকে ১১টা পর্যন্ত। আবার ২-৩ ঘন্টা পর থেকে রাত পর্যন্ত। এসব নিয়ে চিন্তাভাবনার সময় এসে গিয়েছে। হাই টাইম এটা।’ বলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই চিকিৎসক।
‘ঘূর্ণিঝড় মোখা থেকেই তাপপ্রবাহ’
চলমান তাপপ্রবাহের তিনটি কারণের কথা বলছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। যার একটি ঘূর্ণিঝড় মোখা। ‘সাইক্লোন মোখার কারণে বৃষ্টিপাত কম হচ্ছিল। ফলে ভারত-বাংলাদেশে তাপমাত্রা বেশি। মোখার সময় এই পুরো বেল্ট ওভারহিটেড হয়ে যায়। এটা একটা কারণ।’ বলেন আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম।
তিনি জানান, মোখার প্রভাবে এখনো ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহারে অতিরিক্ত তাপমাত্রা বিরাজ করছে। আর সে থেকে লু হাওয়া বইছে বাংলাদেশের দিকে।
কালাম মনে করেন বজ্রঝড় কমে যাওয়াও তাপপ্রবাহের একটা কারণ।
‘প্রত্যেকবার মে মাসে ১৮ থেকে ২৪ দিন বজ্রঝড় বা কালবৈশাখীর আনাগোনা থাকে। ফলে হিমালয় থেকে সেভেন সিস্টার্স পর্যন্ত তাপমাত্রা কম থাকে। কিন্তু সাম্প্রতিককালে দেখা যাচ্ছে বজ্রঝড়ের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ফলে বৃষ্টিও কম হচ্ছে, মাটি উত্তপ্ত থাকছে।’
তাপপ্রবাহের আরেকটা কারণ হল বাতাসে জলীয়বাষ্পের আধিক্য। যা বাতাসের আর্দ্রতা বাড়াচ্ছে। একই সঙ্গে বাতাসের গতিবেগও এখন অনেক কম বলে জানায় আবহাওয়া অফিস। ফলে মানুষের কষ্ট আরও বাড়ছে।
তাপপ্রবাহ শেষ হবে কবে?
এই তাপপ্রবাহ থামাবে বৃষ্টি। আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম জানান, ‘এ মাসের ৯-১০ তারিখে বৃষ্টিতে সিলেট আর চট্টগ্রাম অঞ্চলে তাপপ্রবাহ কমে আসবে। কিন্তু ঢাকা ও উত্তরবঙ্গে তাপপ্রবাহ আরও ১ সপ্তাহ দীর্ঘ হতে পারে।’
তাপপ্রবাহ থেকে নিরাপদ থাকতে নানা রকম স্বাস্থ্য সতর্কতার কথা বলে থাকেন চিকিৎসকরা।
যার অন্যতম হলো- শরীরে পর্যাপ্ত পানির যোগান। তবে সরাসরি ফ্রিজের ঠান্ডা পানি এড়িয়ে চলার পরামর্শ চিকিৎসকদের। এটি হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
একই সঙ্গে আবাসন তৈরিতে তাপ নিরোধক উপাদান ব্যবহারের তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।
স্বাস্থ্যঝুকিঁ ছাড়াও ভবিষ্যতে তাপপ্রবাহ থেকে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কাও দেখছেন ডা. বেনজীর।
‘অতিরিক্ত তাপপ্রবাহ থেকে খরায় কিন্তু শস্য উৎপাদনে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, আগামী আমন ধান নিয়ে কৃষকরা শঙ্কায়, কিছুদিন আগের বৃষ্টি খরা থেকে বাঁচিয়েছে – কিন্তু যদি মারাত্মক দাবদাহ হয়, তাহলে সেটি আমলে না নিয়ে উপায় নেই।’
বেনজীর বলেন তাপপ্রবাহে এরই মধ্যে বিপর্যস্ত আফ্রিকার অনেক দেশ। প্রতিবেশি দেশ ভারতের কিছু রাজ্যেও এ সংকট আছে। আর এরকম কিছু যে বাংলাদেশেও হবে না সেটা বলা যায় না।
তাই সচেতনতার পাশাপাশি তাপপ্রবাহ মোকাবেলায় সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণের তাগিদ দিচ্ছেন তিনি।
সূত্র : বিবিসি বাংলা