‘ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ ভয়াবহ সংঘাতের সূত্রপাত ঘটাবে’

‘ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ ভয়াবহ সংঘাতের সূত্রপাত ঘটাবে’

ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র যদি হস্তক্ষেপ করে, তাহলে তা ‘ভয়াবহ সংঘাতের সূত্রপাত’ হবে বলে মন্তব্য করেছে রাশিয়া।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো ধরনের সামরিক হস্তক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়িয়ে দেবে এবং তা একটি ভয়াবহ সংঘাতের দিকে নিয়ে যাবে।”

আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থাকে ইরানের ভর্ৎসনা

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) এবং সংস্থার মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি-কে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার জন্য দায়ী করে কড়া ভাষায় ভর্ৎসনা করেছে। খবর আলজাজিরার।

বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই এক্স-এ দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, “ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আইএইএ’র পক্ষপাতদুষ্ট রিপোর্টগুলোই ইসরায়েলের হামলার ‘চূড়ান্ত অজুহাত’ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।”

 

ইরানের এই অভিযোগ এমন সময় এসেছে, যখন আইএইএ প্রধান গ্রোসি আল-জাজিরাকে দেওয়া বিশেষ এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তাদের সংস্থার কাছে এমন কোনো তথ্য নেই যা প্রমাণ করে ইরান বর্তমানে পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।

গ্রোসির এই মন্তব্যের জবাবে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বাঘাই বলেন, ‘এখন অনেক দেরী হয়ে গেছে।”

 

তিনি বলেন, “আপনারা সত্য গোপন করে পক্ষপাতদুষ্ট রিপোর্ট দিয়েছিলেন। ইউরোপের তিন দেশ (ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য) এবং যুক্তরাষ্ট্র ওই রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে আমাদের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে একটি প্রস্তাব পাস করে। ওই প্রস্তাবটি চূড়ান্ত অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে গণহত্যাকারী যুদ্ধবাজ ইসরায়েল সরকার ইরানের ওপর আগ্রাসন যুদ্ধ শুরু করে এবং আমাদের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলিতে বেআইনি আক্রমণ চালায়।”

বাঘাই আরো বলেন, “আপনারা কি জানেন, এই অপরাধমূলক যুদ্ধের ফলে কত নিরীহ ইরানি নাগরিক নিহত বা পঙ্গু হয়েছেন? মি. গ্রোসি, এই ধরনের বিভ্রান্তিকর বর্ণনার ভয়াবহ পরিণতি আছে এবং এর জন্য জবাবদিহি করতে হবে।”

 

আইএইএ প্রধান গ্রোসিকে ভর্ৎসনা করে বাঘাই সবশেষে বলেন, “আপনি পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ ব্যবস্থাকে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। আপনি আইএইএ-কে এই অন্যায় আগ্রাসী যুদ্ধে অংশীদার বানিয়েছেন।”

খামেনিকে হত্যার ‘বিপর্যয়কর পরিণতি’ হবে: হিজবুল্লাহ

ইসরায়েলি ও মার্কিন নেতাদের হুমকির পর ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির প্রতি সমর্থন জানিয়ে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। খবর টাইমস অব ইসরায়েলের।

আজ বৃহস্পতিবার হিজবুল্লাহর বিবৃতিতে ঘোষণা করা হয়েছে, “(খামেনিকে) হত্যার হুমকি বোকামি ও বেপরোয়া, এবং এর ভয়াবহ পরিণতি হবে…।”

বিবৃতিতে হিজবুল্লাহ আরো বলেছে, “এই ধরনের কথা (খামেনির ওপর হামলা) কেবল ‍মুখে উচ্চারণ করাটাই লাখ লাখ অনুসারী ও ইসলামের সঙ্গে যুক্তদের কাছে একটি ভয়ানক অপরাধ। এই হুমকি সম্পূর্ণ নিন্দনীয়। আজ, আমরা তার (খামেনির) চারপাশে আরো দৃঢ় ও ঐক্যবদ্ধ।”

টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, শুক্রবার (১৩ জুন) ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েল হামলা শুরু করার পর থেকে হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এখনো যোগ দেয়নি। হিজবুল্লাহ এর আগে এক বিবৃতিতে, তেহরানে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়েছিল। তবে লেবাননের সরকারকে ইঙ্গিত দিয়েছে যে, তারা জড়িত হবে না।

এদিকে, আজ বৃহস্পতিবার লেবাননে ড্রোন হামলা চালিয়ে হিজবুল্লাহর আরো দুজন কমান্ডারকে হত্যার দাবি করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

হাসপাতালে হামলার অভিযোগ অস্বীকার ইরানের

আজ বৃহস্পতিবার সকালে ইরান ইসরায়েলের বিরশেবা শহরের সোরোকা হাসপাতালে ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ইসরায়েলের। হামলায় হাসপাতালটির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ছবি ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো প্রকাশ করেছে। তবে, ইসরায়েলের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইরান।

ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর উদ্বৃতি দিয়ে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ইরনা বলেছে, “আজ সকালের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ‘প্রধান লক্ষ্যবস্তু’ ছিল ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর কমান্ড অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স সদর দপ্তর এবং গাভ-ইয়াম টেকনোলজি পার্কে অবস্থিত সামরিক গোয়েন্দা ক্যাম্প। সামরিক স্থাপনাটি সোরোকা হাসপাতালের পাশে অবস্থিত।”

ইরনা দাবি করেছে, “ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ফলে সৃষ্ট শকওয়েভ থেকে ইসরায়েলি হাসপাতালটি সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”

এতে আরো বলা হয়েছে, “ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলি সামরিক অবকাঠামো ছিল একটি সুনির্দিষ্ট ও সরাসরি লক্ষ্যবস্তু।”

এদিকে ইসরায়েলের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী শ্যারেন হাসকেল সোরোকা হাসপাতালে ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে ‘ইচ্ছাকৃত’ ও ‘অপরাধমূলক’ বলে অভিহিত করেছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে ইসরায়েলের উপ-পররাষ্টমন্ত্রী লিখেছেন, “ইরান সোরোকা হাসপাতালকে সরাসরি লক্ষ্যবস্তু করে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে। এটি কোনো সামরিক ঘাঁটি নয়। এটি একটি হাসপাতাল। এটি ইসরায়েলের সমগ্র নেগেভ অঞ্চলের প্রধান চিকিৎসা কেন্দ্র। ইরানের এই হামলা ‘ইচ্ছাকৃত ও ‘অপরাধমূলক’। বেসামরিক লক্ষ্যবস্তু। বিশ্বকে অবশ্যই এর বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে।”

ইসরায়েলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী উরিয়েল বুসো বলেছেন, “সোরোকা হাসপাতালকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ইরান ‘সীমা’ অতিক্রিম করেছে। এই হামলাকে তিনি ‘যুদ্ধাপরাধ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ হুমকি দিয়ে বলেছেন, “সোরোকা হাসপাতালে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনায় ইরানের নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে তার এই ‘যুদ্ধাপরাধের’ জন্য ‘চরম মূল্য’ দিতে হবে।”

তিনি বলেন, “ইরানি একনায়ক একটি সুরক্ষিত বাঙ্কারের গভীরে বসে ইচ্ছাকৃতভাবে ইসরায়েলের হাসপাতাল ও আবাসিক ভবনগুলোতে আক্রমণ চালাচ্ছেন।”

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী সতর্ক করে বলেন, “এগুলো সবচেয়ে জঘন্য ধরনের যুদ্ধাপরাধ এবং খামেনিকে তার অপরাধের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।”

ইসরায়েলি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সকালে মধ্য ও দক্ষিণ ইসরায়েলে কমপক্ষে চারটি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। এতে বিয়ারশেবার, তেল আবিব, রামাত গান ও হোলন এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

হাসপাতালে ইরানের হামলার পর নেতানিয়াহুর কঠোর বার্তা

ইসরায়েলের সোরোকা হাসপাতালে ও দেশিটির কেন্দ্রীয় এলাকায় ইরানের হামলার বিষয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

সামাজিক মাধ্যমে এক্স হ্যান্ডেলে এক পোস্টে তিনি বলেছেন “আজ সকালে, ইরানের সন্ত্রাসী অত্যাচারীরা বিরশেবার সোরোকা হাসপাতালে এবং মধ্যাঞ্চলে সাধারণ মানুষের উপর ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। আমরা তেহরানের কাছ থেকে এর পুরো মূল্য আদায় করব।”

আজ বিরশেবা শহরের সোরোকা হাসপাতালে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। ইসরায়েলের একজন সামরিক কর্মকর্তা বিবিসিকে জানান, হাসপাতালটি ছাড়াও আরও তিনটি বেসামরিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র। এতে বেশ ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে।

ইরান ‘লাল রেখা’ অতিক্রম করেছে: ইসরায়েলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী

সোরোকা হাসপাতালকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ইরান ‘লাল রেখা’ অতিক্রম করেছে বলে মন্তব্য করেছেন ইসরায়েলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী উরিয়েল বুসো।

তিনি বলেছেন, “বিরশেবা শহরে সোরোকা হাসপাতালকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ইরান একটি ‘লাল রেখা’ অতিক্রম করেছে।”

শনিবারের এই হামলাকে তিনি ‘যুদ্ধাপরাধ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।

বুসোর বক্তব্য উদ্ধৃত করে ইসরায়েলের আর্মি রেডিও জানায়, এটি ইরানি শাসকগোষ্ঠীর দ্বারা সংঘটিত একটি যুদ্ধাপরাধ।

ইসরায়েলি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, সর্বশেষ ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় সোরোকা হাসপাতালে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

এছাড়া, তেল আবিব ও হোলোন শহরেও সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে।

ইরানের সর্বশেষ হামলায় ইসরায়েলে আহত অনেকে

ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে হামলা ও পাল্টা হামলা সপ্তম দিনে গড়িয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে ইরানের সর্বশেষ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে অনেক মানুষ আহত হয়েছেন। টাইমস অব ইসরায়েল এ তথ্য জানিয়েছে।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমটি বলছে, মধ্য ও দক্ষিণ ইসরায়েলে কমপক্ষে চারটি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। এতে বিয়ারশেবার, তেল আবিব, রামাত গান ও হোলন এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

একটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে বিয়ারশেবার এলাকার সোরোকা হাসপাতাল ভবনে। হাসপাতালটির একজন মুখপাত্র বলেছেন, ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে হাসপাতালটির একাধিক ভবন ‘ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে এবং অনেক মানুষ আহত হয়েছেন।

হাসপাতালটি চিকিৎসার জন্য লোকজনকে না আসার জন্য অনুরোধ করেছে।

এদিকে, ইসরায়েলি জরুরি সেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম জানিয়েছে, হলন এলাকায় ইরানি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ২০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর।

টাইমস অব ইসরায়েলের সর্বশেষ খবর অনুসারে, রামাত গান এলাকায় ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় প্রায় ২০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

ইরানের আরাক হেভি-ওয়াটার পারমাণবিক চুল্লিতে হামলা

ইরানের আরাক হেভি-ওয়াটার পারমাণবিক চুল্লিতে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।

ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, ইরানের আরাক হেভি-ওয়াটার নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টরে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।

এর আগে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ওই পারমাণবিক স্থাপনাটির আশপাশের বাসিন্দাদের দ্রুত এলাকা ত্যাগ করার হুঁশিয়ারি দিয়েছিল।

আরাক চুল্লিটি প্লুটোনিয়াম উৎপাদনের সক্ষমতা রাখে এবং এটি তেহরান থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। এটিকে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

এই হামলার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য এখনো প্রকাশ হয়নি।

লেবাননে হিজবুল্লাহর এক কমান্ডারকে হত্যা করার দাবি

লেবাননে হিজবুল্লাহর এক কমান্ডারকে হত্যার দাবি করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে, হিজবুল্লাহর আর্টিলারি কমান্ডার ইয়াসিন আবদেল মোনেম ইয্জেদিনকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর আরবিভাষী মুখপাত্র আভিচাই আদ্রায়ি বলেন, “ইয়াসিন আবদেল ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একাধিক হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন এবং হিজবুল্লাহর আর্টিলারি শক্তি পুনর্গঠনের চেষ্টায় জড়িত ছিলেন।”

তবে ইয়াসিন আবদেল নিহত হওয়ার বিষয়ে এখন পর্যন্ত হিজবুল্লাহ কোনো মন্তব্য করেনি।

ইরানের ৪টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে ইসরায়েলে, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

আজ বৃহস্পতিবারস সকালে ইরান ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে নতুন করে ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো কিছুক্ষণ আগে জানিয়েছে, মধ্য ও দক্ষিণ ইসরায়েলের একাধিক এলাকায় ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে।

টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, মধ্য ও দক্ষিণ ইসরায়েলে সর্বশেষ এই হামলায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন এবং কমপক্ষে চারটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে।

হামলা স্থানগুলোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

টাইমস অব ইসরায়েলের সর্বশেষ খবর বলা হয়েছে, ইরান থেকে ছোড়া একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি বিয়ারশেবার সোরোকা হাসপাতালে আঘাত হেনেছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও স্পষ্ট নয়।

ইরানের বেসামরিক অবকাঠামোর ওপর হামলা বন্ধের আহ্বান মাখোঁর

ফ্র্যান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর কার্যালয় এলিসি জানিয়েছে, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান সংঘাতের অবসান ঘটাতে প্যারিস ইউরোপীয় অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পরামর্শ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। খবর আল জাজিরার।

আজ বৃহস্পতির এলিসি প্রাসাদ এক বিবৃতিতে বলেছে, প্রেসিডেন্ট মাখোঁ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের এক সভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিন-নোয়েল ব্যারোটকে আগামী দিনে ‘ঘনিষ্ঠ ইউরোপীয় অংশীদারদের সঙ্গে একটি উদ্যোগ তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছেন, যা সংঘাতের অবসান ঘটানোর জন্য আলোচনার মাধ্যমে যৌক্তিক সমাধানের প্রস্তাব করবে।’

তবে, পরিকল্পনার ধরন সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।

এলিসি প্রাসাদ আরো জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট মাখোঁ ইসরায়েলকে ইরানের পারমাণবিক কর্মকাণ্ড বা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এমন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা বন্ধ করারও আহ্বান জানিয়েছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট মাখোঁ ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা ক্রমশ বৃদ্ধির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ‘ইসরায়েলি হামলা ইরানের পারমাণবিক বা ব্যালিস্টিক কর্মসূচির সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এমন লক্ষ্যবস্তুতে ক্রমবর্ধমান আঘাত করছে এবং ইরান ও ইসরায়েলে বেসামরিক নাগরিকের ক্রমবর্ধমান সংখ্যক হতাহতের ঘটনা’ নিয়ে ফরাসি প্রেসিডেন্ট গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

ফরাসি নেতা বলেছেন, “এই সামরিক অভিযানগুলো জরুরিভাবে বন্ধ করা প্রয়োজন, যা আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য উল্লেখযোগ্য হুমকি।”

এলিসি প্রাসাদ আরো জানিয়েছে, ফ্রান্সের নাগরিকরা ইসরায়েল বা ইরান ত্যাগ করতে চাইলে তাদেরকে সহায়তায় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মাখোঁ।

জ্যেষ্ঠ রিপাবলিকান সিনেটরের ইরানের ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার আহ্বান

যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম তাদের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ইরানের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে পাহাড়ের নিচে অবস্থিত ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনায় সরাসরি হামলা চালাতে আহ্বান জানিয়েছেন।

ইরান-ইসরায়েলের সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পক্ষ নিয়ে হামলা চালাবে কি না, তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে গ্রাহাম এই আহ্বান জানালেন। অবশ্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এরই মধ্যে ইরানের মার্কিন  হামলা অনুমোদন করেছেন; তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি।

এ অবস্থায় ট্রাম্পের প্রতি এক বিবৃতিতে লিন্ডসে গ্রাহাম লিখেছেন, “ইসরায়েল আকাশপথে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে এবং ইরানের সামরিক ও বৈজ্ঞানিক নেতৃত্বকে ধ্বংস করেছে। তারা ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামোরও বড় ক্ষতি করেছে। কিন্তু এখনো যেটি অক্ষত রয়েছে- গভীর মাটির নিচে অবস্থিত ফোরদো স্থাপনা; সেটি ধ্বংস না করা পর্যন্ত ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম থামবে না।”

তিনি আরো লেখেন, “এমন গভীর ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় হামলার জন্য যেসব সক্ষমতা প্রয়োজন, তা কেবল আমেরিকারই আছে। কাজটা শেষ করো।”

ফোরদো স্থাপনাটি আনুমানিক ৮০ মিটার (প্রায় ২৬০ ফুট) পাথর ও মাটির নিচে অবস্থিত। বিশ্লেষকদের মতে, এটি এতটাই সুরক্ষিত যে, কেবলমাত্র যুক্তরাষ্ট্রেরই ‘বাঙ্কার-বাস্টিং’ বোমা দিয়ে এই স্থাপনার প্রকৃত ক্ষতি করা যেতে পারে।

তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ইরান বহুবার পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা বলেছে, তারা ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রমে অস্ত্র তৈরির কোনো প্রমাণ পায়নি।

লিন্ডসি গ্রাহাম হচ্ছেন দক্ষিণ ক্যারোলাইনা অঙ্গরাজ্য থেকে নির্বাচিত জ্যেষ্ঠ মার্কিন সিনেটর। তিনি ২০০৩ সাল থেকে এই পদে রয়েছেন। একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ ও আইনজীবী হিসেবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করে আসছেন।

তিনি কংগ্রেসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়া ও কমিটির কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। বিশেষ করে প্রতিরক্ষা, বৈদেশিক নীতি ও বিচার বিভাগসংক্রান্ত বিষয়ে তিনি স্পষ্ট ও দৃঢ় অবস্থানের জন্য পরিচিত।

ইরানে ইসরায়েলের হামলার বিরুদ্ধে নিউ ইয়র্কে বড় বিক্ষোভ

ইরানে ইসরায়েলের হামলা বন্ধের দাবিতে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে এই সংঘাতে না জড়ানোর বার্তা দিতে প্রেসিডেন্টের আবাসিক কার্যালয় হোয়াইট হাউসের সামনে বিক্ষোভের পর এবার নিউ ইয়র্ক শহরে বিক্ষোভ দেখিয়েছে বহু মানুষ।

অ্যাকটিভিস্টদের অনলাইনে পোস্ট করা ভিডিও অনুযায়ী, শত শত মানুষ নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটনে মিছিল করেছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রের ইরানে হামলার হুমকি এবং ইসরায়েলের গাজায় যুদ্ধকে সমর্থনের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছে।

তাদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘ইরান থেকে এখনই হাত সরাও’ এবং ‘গণহত্যায় অর্থায়ন বন্ধ করো’।

ইরানে এ পর্যন্ত নিহত ৬৩৯ : হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস

ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের চলমান হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ৬৩৯ জন নিহত ও ১ হাজার ৩২০ জনের বেশি আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস। ইরান-ইসরায়েল সংঘাত এরই মধ্যে সপ্তম দিনে পৌঁছেছে।

আজ বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে আল জাজিরা। হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টসের তথ্যানুসারে, ইরানে ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত নিহতদের মধ্যে ২৬৩ জন বেসামরিক নাগরিক এবং ১৫৪ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যকে শনাক্ত করা হয়েছে। আহত হয়েছেন ১ হাজার ৩২০ জন।

তারা বলছে, ইরানের স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের সঙ্গে হতাহতের সংখ্যা মিলিয়ে দেখা হয়েছে।

তবে ইরান সরকার ইসরায়েলের চলমান তীব্র হামলায় নিয়মিতভাবে হতাহতের সংখ্যা প্রকাশ করেনি। সর্বশেষ সোমবার (১৬ জুন) প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ১ হাজার ২৭৭ জন আহত হয়েছেন বলে জানানো হয়েছিল।

ইরানে মার্কিন হামলার পরিকল্পনায় ট্রাম্পের অনুমোদন

ইরানে সম্ভাব্য মার্কিন সামরিক হামলার পরিকল্পনায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এখনো পর্যন্ত তিনি চূড়ান্ত নির্দেশ দেননি।

বিষয়টি সম্পর্কে অবগত একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। খবর আনাদোলুর।

সূত্রগুলো বলছে, ট্রাম্প এখনো চূড়ান্ত নির্দেশ দেননি এটা দেখার জন্য যে, তেহরান তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে সরে আসে কি না।

যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য লক্ষ্যগুলোর একটি হলো ইরানের ফোর্দো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র। এটি পাহাড়ের নিচে অবস্থিত এবং সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি এতটাই সুরক্ষিত যে কেবল সবচেয়ে শক্তিশালী বোমাগুলোর পক্ষেই এটি ধ্বংস করা সম্ভব।

এর আগে ট্রাম্পকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তিনি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কি না। জবাবে তিনি বলেন, আমি করতেও পারি, নাও করতে পারি। এরপর তিনি আবারও ইরানের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের দাবি তুলে বলেন, আগামী সপ্তাহটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে। হয়তো সপ্তাহও লাগবে না।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি এর আগে স্পষ্ট করে বলেছেন, তার দেশ আত্মসমর্পণ করবে না। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি সামরিক হস্তক্ষেপ করে, তাহলে তার অপূরণীয় পরিণতি হবে।

ইরানে বড় আকারে হামলা শুরু করল ইসরায়েল

ইরানে বড় আকারে হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী কিছুক্ষণ আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ এক পোস্টে এ তথ্য জানিয়েছে। খবর আল জাজিরার।

পোস্টে বলা হয়েছে, “ইসরায়েলি বিমান বাহিনী এখন তেহরান এবং ইরানের অন্যান্য অঞ্চলে ধারাবাহিক হামলা চালাচ্ছে।”