লস অ্যাঞ্জেলেসে আরো ২ হাজার ন্যাশনাল গার্ড, ৭শ মেরিন সেনা মোতায়েন

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেস শহর অভিবাসনবিরোধী অভিযানের জেরে আজ চারদিন ধরে ব্যাপক বিক্ষোভে উত্তাল। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে সেখানে আরো ২ হাজার ন্যাশনাল গার্ড এবং ৭০০ মেরিন সেনা সদস্য পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

মঙ্গলবার ১০ জুন) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আজ চার দিন ধরে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে আছে লস অ্যাঞ্জেলেস। শুক্রবার (৬ জুন) শুক্রবার লাতিন-অধ্যুষিত এলাকা প্যারামাউন্ট ডিস্ট্রিক্টে নথিবিহীন অভিবাসী গ্রেপ্তারে অভিযানে নামলে স্থানীয় লোকজন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইসিই) সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। এরপর থেকেই শুরু হয় বিক্ষোভ ও উত্তেজনা।

ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসী বিতাড়নের আগ্রাসী নীতির বিরুদ্ধে এটি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় সংঘাতের রূপ নিয়েছে।

বিক্ষোভ দমনে শনিবার (৭ জুন) পুলিশ ও আইসিই সদস্যদের সহায়তার জন্য মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন আধা সামরিক বাহিনী হাজার ন্যাশনাল গার্ডের ২ হাজার সদস্যকে মোতায়েনের নির্দেশ দেন ট্রাম্প। কিন্তু তাতে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটার পরিবর্তে সংঘাত আরো বাড়তে থাকে।

এই অবস্থায় গতকাল সোমবার লস অ্যাঞ্জেলেসে আরো ২ হাজার ন্যাশনাল গার্ড এবং তাদের সঙ্গে ৭০০ মেরিন সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাম্প।

সোমবার সন্ধ্যায় শত শত বিক্ষোভকারী লস অ্যাঞ্জেলেসের কেন্দ্রস্থলে একটি ফেডারেল আটক কেন্দ্রে জড়ো হলে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে শুরু করে। সেখানে আটক রয়েছে বহু অভিবাসী।

ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যরা মানব প্রাচীর তৈরি করে ভবনের সামনে অবস্থান নেয়। পরে লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ ‘লেস লেথাল’ বা কম প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে গ্যাস নিক্ষেপ করে। এলএপিডি জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা পুলিশ সদস্যদের দিকে বস্তু নিক্ষেপ শুরু করলে তারা এই অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি পায়। এক্স (সাবেক টুইটার)-এ দেওয়া এক বার্তায় পুলিশ জানায়, ‘লেস লেথাল মিউনিশন ব্যথা ও অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে।

সোমবার নিউইয়র্ক সিটি, ফিলাডেলফিয়া এবং সান ফ্রান্সিসকোতেও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর এক বিবৃতিতে বলেছে, বিক্ষোভ ঠেকাতে অন্যান্য বাহিনীকে সহায়তা করতে ৭০০ মেরিন সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে। এছাড়া ন্যাশনাল গার্ড সদস্যের উপস্থিতি বাড়িয়ে ৪০০০ করা হচ্ছে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, “আমি আর কোনো উপায় দেখছিলাম না। সহিংসতা যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায়, সে জন্যই এই সিদ্ধান্ত।”

এছাড়া ট্রাম্প তার সীমান্ত নিরাপত্তা উপদেষ্টা টম হোম্যানের প্রস্তাবে সমর্থন দেন, যেখানে বলা হয়েছিল ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসোমকে তার প্রশাসনের অভিবাসন নীতিতে বাধা দেওয়ার জন্য গ্রেপ্তার করা উচিত। ট্রাম্প বলেন, “আমি হলে তাই করতাম। দারুণ প্রস্তাব।”

বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসমের বিবাদ তুঙ্গে। গভর্নরের মতামত ছাড়াই বিক্ষোভ দমনে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন গ্যাভিন নিউসম।

স্থানীয় সময় সোমবার (৯ জুন) সানফান্সিসকোর ফেডারেল আদালতে করা মামলায় ডোনাল্ড ট্রাম্প, প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ ও প্রতিরক্ষা বিভাগকে বিবাদী করা হয়েছে। আরজিতে ট্রাম্প কর্তৃক ন্যাশনাল গার্ড সেনা মোতায়েনকে অসাংবিধানিক ঘোষণা এবং সেনা মোতায়েনে স্থগিতাদেশ দেওয়ার জন্য আদালতকে অনুরোধ করা হয়েছে।

ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নরের বলেন, “মেরিন সেনারা আমাদের বীর। একজন একনায়কোচিত প্রেসিডেন্টের উন্মাদ বাস্তবতা বর্জিত ইচ্ছা পূরণের জন্য নিজের দেশের মাটিতে তাদের দেশবাসীর মুখোমুখি দাঁড় করানো উচিত নয়। এটা আমেরিকান আদর্শের পরিপন্থি।”