জুমা সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ ও সর্বাধিক বরকতময় দিন। এ দিনে আল্লাহর রহমত, মাগফিরাত ও জান্নাত লাভের অসংখ্য দুয়ার উন্মুক্ত হয়। জুমার দিনের অন্যতম ফযীলতপূর্ণ আমল হলো সূরা কাহাফ তিলাওয়াত; যার রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতমুখী অসংখ্য কল্যাণ, বিশেষত দাজ্জালের ভয়াবহ ফিতনা থেকে হেফাজতের নিশ্চয়তা।
রাসূল (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি জুমার দিনে সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করবে, তার পায়ের নিচ থেকে আসমান পর্যন্ত নূর বিচ্ছুরিত হবে; যা কিয়ামতের দিন তার জন্য আলো হবে। আর দুই জুমার মধ্যকার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।” (মুস্তাদরাক হাকিম)
রাসূল (সা.) অন্য এক হাদীসে বলেন, “যে ব্যক্তি সূরা কাহাফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্থ রাখবে, সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে নিরাপদ থাকবে।” (সহীহ মুসলিম)
ইসলামী ক্যালেন্ডারে দিন গণনা শুরু হয় সূর্যাস্ত থেকে। অর্থাৎ, জুমা শুরু হয় বৃহস্পতিবার মাগরিব থেকে এবং শেষ হয় শুক্রবার মাগরিবে। সূরা কাহাফ তিলাওয়াতের প্রসঙ্গে হাদীসে ‘জুমার দিন’ শব্দ এসেছে, যা দিন ও রাত উভয়কেই অন্তর্ভুক্ত করে। অতএব, এই সময়সীমার মধ্যে যেকোনো সময়ে সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করলে ফযীলতের আশা করা যায়। তবে কতক আলেমের মতে, শুক্রবার দিনের বেলায় তিলাওয়াত করাই অধিক ফযীলতপূর্ণ। কেননা হাদীসে ‘জুমার দিন’ বলা হয়েছে, যা দিনের দিকেই ইঙ্গিত করে।
সূরা কাহাফ তিলাওয়াতের সময় মাগরিব থেকে শুরু হবে না কি ফজর থেকে—এই বিষয়ে সূক্ষ্ম মতপার্থক্য থাকলেও সবাই একমত যে প্রথম প্রহরে পড়ে নেওয়া উত্তম। এজন্য অনেকেই শুক্রবারের রাত শুরুতেই (বৃহস্পতিবার মাগরিবের পর) সূরা ওয়াকিয়া ও অন্যান্য আযকারের সঙ্গে সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করে থাকেন। অথবা শুক্রবার ফজরের পর সূরা ইয়াসিন এবং অন্যান্য আযকারের সাথে সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করাও একটি উত্তম পদ্ধতি।
বিলম্ব না করে শুরুতেই তিলাওয়াতের অভ্যাস গড়ে তুললে পরবর্তী ব্যস্ততা বা ক্লান্তির কারণে তিলাওয়াত বাদ পড়ার আশঙ্কা অনেকাংশে কমে যায়। শুক্রবার রাতের শুরুতেই অথবা ফজরের পর তিলাওয়াত করে ফেলা—এটাই সবচেয়ে উত্তম ও নিরাপদ অভ্যাস। এ সময় কেউ যদি কোনো কারণে তিলাওয়াত করতে না পারেন, তবে জুমার নামাযের আগে-পরে কিংবা আসরের আশেপাশের সময়ও সুযোগ রয়েছে। এতে করে ফযীলত থেকে বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনাও কমে আসে।
অন্যদিকে, কেউ যদি কেবল জুমার নামাযের পর সূরা কাহাফ তিলাওয়াতের অভ্যাস গড়ে তোলেন, তবে ব্যস্ততা বা ভুলে যাওয়ার কারণে এ সময় তিলাওয়াত করতে না পারলে পরে আর তেমন সুযোগ নাও মিলতে পারে। এতে করে ফযীলত থেকে বঞ্চিত হবার আশঙ্কা থাকে। তাই আমাদের উচিত শুক্রবারের প্রথম প্রহরেই সূরা কাহাফ তিলাওয়াতের অভ্যাস গড়ে তোলা।
দাজ্জালের আগমন অনিবার্য। আমরা তাকে এড়িয়ে যেতে পারবো না, কিন্তু প্রস্তুত থাকতে পারবো প্রতি শুক্রবার সূরা কাহাফ তিলাওয়াতের মাধ্যমে। এই নিয়মিত আমল আমাদের আত্মাকে শক্তিশালী করবে, ঈমানকে জাগ্রত রাখবে এবং দাজ্জালের ভয়াবহ ফিতনা থেকে রক্ষা করবে, ইন শা আল্লাহ।