মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। রক্ত, মাংস আর শিরা-উপশিরায় তৈরি এই মানবদেহ এমন সূক্ষ্মাতি-সূক্ষ্ম অনুভূতিবোধ দিয়ে তৈরি, যেখানে সামান্য কিছুতেই মানুষ খুশি হয়, রাগ হয়, সুখ অনুভব করে ও কষ্ট পায়। কাজেই এ কথা অবলীলায় বলা যায় যে রাগ মানুষের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। কিন্তু রাগ যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তখন তা নিজ শরীর বা পরকালীন
আমলনামা—সর্বত্রই বিপদের কারণ হিসেবে পরিগণিত হয়।
অনিয়ন্ত্রিত রাগ মানুষকে শারীরিক অনেক ক্ষতির মধ্যে ফেলতে পারে, যা কখনো কখনো জীবনও হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
২০১৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণাপত্র নিশ্চিত করেছে যে ‘রাগ হূিপণ্ডের কার্যকারিতা ধ্বংস করে দেয় এবং রাগের পরের দুই ঘণ্টার মধ্যে মারাত্মক হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে আট গুণেরও বেশি বৃদ্ধি করে।’ সেখানে গবেষকরা বলছেন, একবার রেগে গেলে আপনার হূত্স্পন্দন দ্রুত হয়, রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায়, জমাট বাঁধা বৃদ্ধি পায়, রক্তনালি সংকুচিত হয় এবং রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়।
এসব হাদিসে এ কথার প্রমাণ বহন করে যে নবী (সা.) রাগকে যেকোনো উপায়ে হলেও দমন ও নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাদের নির্দেশনা দিয়ে গেছেন।
আমরা সামাজিক জীব হিসেবে সমাজের নানা আচারে বিচরণের ক্ষেত্রে রাগান্বিত হতেই পারি, মন্দ অনুভূতির সম্মুখীন হতেই পারি। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে প্রকৃত মুমিনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে রাগকে নিয়ন্ত্রণ করা। সব চেয়ে উত্তম উপায় হচ্ছে প্রতিপক্ষকে ক্ষমা করে দেওয়া। যেমন—মহান আল্লাহ তাআলা সুরা শুরায় খাঁটি মুমিনের গুণাবলি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘যারা মহাপাপ ও অশ্লীল কাজ থেকে দূরে থাকে এবং ক্রোধান্বিত হলে ক্ষমা করে দেয়।’ (সুরা : শুরা, আয়াত : ৩৭)
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে দুনিয়ার জীবনে সুস্থতা ও পরকালীন জীবনে মুক্তির জন্য হলেও নিজেদের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে খাঁটি মুমিনের দলভুক্ত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।