‘ট্র্যাজিডি কুইন’ হবেন কিয়ারা?

বলিউডের ‘ট্র্যাজিডি কুইন’ মীনা কুমারি। তার জীবন সিনেমার চেয়েও ট্র্যাজিক কম ছিল না। গত কয়েক বছর ধরে তার বায়োপিক নির্মাণ নিয়ে আলোচনা চলছে। মীনা কুমারির পরিবারের কাছ থেকে বায়োপিকের স্বত্ব কিনে নিয়েছেন সিদ্ধার্থ পি. মালহোত্রা। এ বায়োপিকের নাম ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য অন্তঃসত্ত্বা কিয়ারা আদভানিকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। পিঙ্কভিলা এ খবর প্রকাশ করেছে।

একটি সূত্র সংবাদমাধ্যমটিকে বলেন, “মীনা কুমারির চরিত্রে অভিনয়ের জন্য নির্মাতারা কিয়ারা আদভানির সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। আইকনিক চরিত্রটির জন্য কিয়ারা উপযুক্ত বলে মনে করছেন পরিচালক, ক্রিয়েটিভ টিম। ইতোমধ্যে অভিনেত্রীকে চিত্রনাট্য শোনানো হয়েছে। কিয়ারা চিত্রনাট্য পছন্দ করেছেন। তবে এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সম্মতি দেননি।”

কিয়ারা আদভানি

ব্যক্তিগত জীবনে মীনা কুমারি বিয়ে করেছিলেন পরিচালক কামাল আমরোহিকে। মীনা কুমারির চরিত্রে কিয়ারা অভিনয় করলে, তার স্বামী অর্থাৎ কিয়ারার বিপরীতে কে অভিনয় করবেন তা নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

সবকিছু ঠিক থাকলে খুব শিগগির মা হবেন কিয়ারা আদভানি। মীনা কুমারি হতে রাজি হলে, মাতৃত্বকালীন ছুটি কাটিয়ে এ সিনেমার মাধ্যমে ক্যামেরা-অ্যাকশনে ফিরবেন কিয়ারা।

এর আগে পরিচালক তিগমাংশু ধুলিয়া মীনা কুমারির বায়োপিক তৈরির পদক্ষেপ নেন। প্রথমে কঙ্গনা রাণৌতকে প্রস্তাব দিলে তা ফিরিয়ে দেন। এরপর বিদ্যা বালানকে প্রস্তাব দিলে তা লুফে নেন। কারণ বিদ্যার ‘গার্ল ক্রাশ’ মীনা কুমারি। যদিও মীনা কুমারির পরিবারের আপত্তির কারণে বাদ পড়েন বিদ্যা বালান।

এরপর মনীষ মালহোত্রা মীনা কুমারিকে নিয়ে বায়োপিক নির্মাণের উদ্যোগ নেন। আর মীনা কুমারির চরিত্রের জন্য কৃতি স্যাননকে চূড়ান্ত করেন। তবে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে তা থমকে যায়।

১৯৩৩ সালের ১ আগস্ট মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন মীনা কুমারি। অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল হওয়ায় মীনাকে ফিল্মে কাজ করতে বাধ্য করেন তার বাবা। মাত্র ১৭ বছর বয়সে নায়িকা খ্যাতি লাভ করেন মীনা। যখন আর্থিক সচ্ছলতা আসতে শুরু করে; তখন ফুসফুস ক্যানসারে তার মায়ের মৃত্যু হয়।

মীনা কুমারি

মায়ের মৃত্যুর পর পরিচালক কামাল আমরোহির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান মীনা। ১৯৫২ সালে অর্থাৎ ১৮ বছর বয়সে গোপনে কামাল আমরোহিকে বিয়ে করেন মীনা। অথচ ৩৪ বছর আগেই কামাল বিবাহিত। মীনার চিন্তা ছিল লাখ দুয়েক টাকা জমলে সেই টাকা বাবার হাতে দিয়ে বিয়ের কথা বলবেন, যাতে সংসার চালাতে কষ্ট না হয়। কিন্তু মীনার বাবা বিয়ের কথা জানার পর কামালকে তালাক দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন।

মীনা চলে যান স্বামী কামালের বাড়িতে। কিন্তু কামাল আমরোহি মীনার জীবনের সুখ হতে পারেননি। পরিচালক স্বামী তাকে সিনেমায় কাজ করতে দেন তিনটি শর্তে। শুটিং থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার মধ্যে বাড়িতে ফিরে আসতে হবে, যাতায়াত নিজেদের গাড়িতে আর মেকআপ রুমে মেকাপম্যান ছাড়া আর কাউকে আসতে দেওয়া যাবে না। সময়ের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ক্রমে তিক্ত হতে থাকে।

মীনা কুমারি

কামাল আমরোহি রীতিমতো গোয়েন্দা লাগিয়ে রেখেছিলেন মীনার পেছনে। ১৯৬৩ সালে সাহেব বিবি অর গুলাম মনোনীত হয় বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবের জন্য। কামাল আমরোহির আপত্তির কারণে বার্লিনে যাওয়া হয়নি মীনার। আর নিয়মিত শারীরিক নির্যাতন তো চলতই। পিতাকে ছেড়ে যে বাড়িতে গিয়েছিলেন, সে বাড়িও ছাড়েন মীনা। তার শেষ আশ্রয় হয় অ্যালকোহল আর কবিতা। ১৯৬৮ সালে শনাক্ত হয়, মীনা লিভার সিরোসিস রোগে ভুগছেন। ১৯৭২ সালে মারা যান এই অভিনেত্রী।