গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের কালোদিন আজ

আজ ১৬ জুন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের সেই কালো দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনটিতে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে তৎকালীন বাকশাল সরকার চারটি পত্রিকা সরকারি ব্যবস্থাপনায় রেখে বাকি সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়। এতে হাজারো সাংবাদিকসহ গণমাধ্যমকর্মী রাতারাতি বেকার হয়ে দুঃসহ জীবনে পতিত হন। জনগণ সঠিক তথ্য ও বস্তুনিষ্ঠ খবর জানা থেকে বঞ্চিত হয়। গোটা দেশে একরকম ঘোর অন্ধকার নেমে আসে। জবরদস্তিমূলকভাবে তখন সাংবাদিকসহ অন্যান্য পেশাজীবীদের বাকশালে যোগদানে বাধ্য করা হয়। অনেক সাংবাদিক সেদিন জীবন-জীবিকার ভয়ে বাকশালের ফরম পূরণ করেন। ওই সময়ের সরকারের ন্যক্কারজনক হস্তক্ষেপে রুদ্ধ হয় গণমাধ্যম, রাজনৈতিক, গোষ্ঠীগত ও ব্যক্তির বাকস্বাধীনতা। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি একটি কালোদিন হিসাবে চিহ্নিত।

বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজেসহ বিভিন্ন সামাজিক এবং পেশাজীবী সংগঠন বাকশাল সরকারের এহেন নিবর্তনমূলক অধ্যাদেশ জারির দিনটিকে ১৯৭৬ সাল থেকে সাংবাদিক সমাজ সংবাদপত্রের কালো দিবস হিসাবে পালন করে আসছে। এ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজের যৌথ উদ্যোগে আজ সোমবার সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিতব্য এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। এছাড়াও সাংবাদিক নেতা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীরা এসময় উপস্থিত থাকবেন।

এদিকে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম রোববার এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র তিন বছর পর সংসদে আনা হয়েছিল সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সম্পূর্ণ পরিপন্থি এই সংশোধনীর ফলে জাতির ঘাড়ে চেপে বসে একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশালের জগদ্দল পাথর। এরই ধারাবাহিকতায় ওই বছর ১৬ জুন বিতর্কিত বাকশাল সরকার সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়। সরকারি প্রচারপত্র হিসাবে চারটি পত্রিকা সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রকাশ করা হয়। এতে সাংবাদিকসহ কয়েক হাজার সংবাদকর্মী বেকার হয়ে দুঃসহ জীবন-যাপনে বাধ্য হন। সংবাদমাধ্যম ও বাক-স্বাধীনতা হরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি একটি কালোদিন হিসাবে চিহ্নিত। জাতীয় ইতিহাসের অন্যতম কলঙ্কজনক দিন এটি। এজন্য সাংবাদিক সমাজ প্রতিবছর এ দিনটিকে ঘৃণা ও ধিক্কারের সঙ্গে ‘কালো দিবস’ হিসাবে পালন করে থাকে।

তারা বলেন, আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ৭৫ সালের নভেম্বরে সিপাহি-জনতার বিপ্লবে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। তিনি সংবিধানে জনগণের কাঙ্ক্ষিত বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তন করে বাকশাল সরকারের সব প্রকার অগণতান্ত্রিক কালো ধারা বাতিল এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। সাংবাদিক নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই প্রথম টার্গেট করে সংবাদমাধ্যমকে। সর্বশেষ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসেও একই পথ অনুসরণ করে দলটি। বিগত ১৬ বছরে জনপ্রিয় অসংখ্য সংবাদপত্র, বেসরকারি টেলিভিশন, অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে কয়েক হাজার সাংবাদিককে বেকারত্বের মুখে ঠেলে দেয়। সরকারের রক্তচক্ষুর সামনে অসহায় আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে সাংবাদিক ও গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানকে। বস্তুনিষ্ঠ ও সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিকতা অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। অকল্পনীয় হুমকির মুখে পড়ে সাংবাদিকদের জীবন ও জীবিকা।

১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহি জনতার অভাবনীয় বিপ্লবের মধ্য দিয়ে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার পর সাংবাদিকদের লেখার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অবারিত করেন। শুধু তাই নয়, জিয়াউর রহমান দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমে সংবাদপত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক সব কালাকানুন শিথিল করে দেশের সব জায়গা থেকে সংবাদপত্র প্রকাশে উৎসাহ প্রদান করেন। প্রকাশিত সংবাদপত্র টিকিয়ে রাখা সরকারেরই দায়িত্ব বলেই তিনি মনে করতেন। জিয়াউর রহমান রাজশাহী থেকে ‘দৈনিক বার্তা’ নামে একটি প্রথম শ্রেণির পত্রিকা প্রকাশের ব্যবস্থা করেন। এ পত্রিকা ঘিরে সমগ্র উত্তরাঞ্চলে তথ্যপ্রবাহের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটে। বহু সাংবাদিকের কর্মসংস্থান হয়। ডিক্লারেশনের শর্ত শিথিল করার কারণে সে সময় ঢাকা থেকে শুরু করে বিভাগীয়, জেলা, এমনকি থানা পর্যায় থেকে দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক এবং মাসিক পত্রিকা প্রকাশ হতে থাকে। এসব পত্রিকা টিকিয়ে রাখতে জিয়াউর রহমান সরকারি বিজ্ঞাপন বণ্টননীতিও শিথিল করেন। বিভিন্ন সরকারি, আধা-সরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন বণ্টন ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণমুক্ত করেন। একই সঙ্গে সরকারি বিজ্ঞাপনের ৬০ ভাগ ঢাকা থেকে প্রকাশিত পত্রিকায় এবং বাকি ৪০ ভাগ মফস্বল থেকে প্রকাশিত পত্রিকায় বণ্টনের ব্যবস্থা করেন। এর ফলে সারা দেশে সংবাদপত্র প্রকাশনায় নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজের সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, জাতীয় ইতিহাসের অন্যতম কলঙ্কজনক দিন এটি। এ জন্য সাংবাদিকসমাজ প্রতিবছর এ দিনটিকে ঘৃণা ও ধিক্কারের সঙ্গে ‘কালো দিবস’ হিসাবে পালন করে থাকে। তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিবাদ মুক্ত নতুন বাংলাদেশে সংবাদপত্র তার ভূমিকা যথাযথ ভাবে পালন করবে। কালোকে কালো আর সাদাকে সাদা বলবে।