জাতিসংঘ মহাসচিবকে ইরানের কড়া চিঠি

পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের কাছে একটি কড়া চিঠি দিয়েছে ইরান। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি চিঠিতে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি এই হামলাকে ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্কের এক নজিরবিহীন ভাঙন’ হিসেবে উল্লেখ করেন এবং যার ‘ভয়াবহ পরিণতি’ হতে পারে বলে সতর্ক করেন।

চিঠিতে আরাগচি বলেন, ‘এই উসকানিমূলক ও অবৈধ আগ্রাসনের ফলে ব্যাপক বেসামরিক প্রাণহানি এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশগত ধ্বংসের সম্ভাবনা রয়েছে।’

তিনি জানান, রবিবার ভোরে চালানো হামলাগুলো ইরানের উত্তর-মধ্য ও কেন্দ্রীয় অঞ্চলে অবস্থিত তিনটি শান্তিপূর্ণ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনাকে লক্ষ্য করেছিল।

ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতিসংঘ মহাসচিবকে স্মরণ করিয়ে দেন, এই হামলা চালিয়েছে এমন একটি দেশ, যার পারমাণবিক অস্ত্র আছে। আর যে দেশের ওপর হামলা হয়েছে, ইরান, তার কোনও অপ্রচলিত অস্ত্র নেই এবং তার পারমাণবিক কার্যক্রম জাতিসংঘ পারমাণবিক সংস্থা আইএইএ-এর পূর্ণ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘এই নজিরবিহীন আগ্রাসন জাতিসংঘ ও বহুপাক্ষিক কাঠামোগুলোকে এক ভয়াবহ সংকটের মুখে ঠেলে দিয়েছে।’

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করার আহ্বান জানিয়ে আরাগচি বলেন, ‘জরুরি ভিত্তিতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ডাকা প্রয়োজন এবং পরিষদকে যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলার বিরুদ্ধে ‘একটি স্পষ্ট, শক্ত এবং দ্ব্যর্থহীন নিন্দা জানাতে হবে’।’

আরাগচি এই হামলাকে ‘একজন যুদ্ধাপরাধীর পক্ষে পরিচালিত অপরাধমূলক হামলা’ বলে আখ্যা দেন।

তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই এই অপরাধের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।’

তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে উল্লেখ করে বলেন, ‘একজন যুদ্ধাপরাধী যিনি বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার মুখে রয়েছেন, তার নেতৃত্বে পরিচালিত সরকারকে সহায়তা করতে গিয়েই যুক্তরাষ্ট্র এই হামলা চালিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, এই হামলার মাধ্যমে একদিকে পারমাণবিক অস্ত্রহীন একটি দেশকে টার্গেট করা হয়েছে, অন্যদিকে যারা পারমাণবিক অস্ত্র রাখে এবং পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটিতে) সই করেনি, সেই ইসরায়েলই মূল হামলাকারী।

চিঠির শেষদিকে আরাগচি জাতিসংঘ মহাসচিবকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনি জাতিসংঘের অভিভাবক হিসেবে এই অবৈধতা ও শান্তির ওপর এই হামলার বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নেবেন বলে বিশ্ব আশা করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ব তাকিয়ে আছে। নিষ্ক্রিয়তা শুধু এই সংকটকে তীব্রতর করবে না, বরং বৈশ্বিক নিরাপত্তাকেও আরও দুর্বল করে দেবে।’

এদিকে এক প্রতিক্রিয়ায় জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘ইরানে মার্কিন হামলা বিপজ্জনক উত্তেজনা তৈরি করেছে।’

তিনি বলেন, ‘আজকে ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বলপ্রয়োগে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এটি এমন একটি অঞ্চলে বিপজ্জনক উত্তেজনা সৃষ্টি করবে যা ইতিমধ্যে চরম অবস্থায় রয়েছে এবং এটি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি।’

সামাজিক মাধ্যম এক্সে করা পোস্টে তিনি আরও বলেন, ‘এই সংঘাত দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে-যার পরিণতি বেসামরিক নাগরিক, অঞ্চল এবং বিশ্বের জন্য বিপর্যয়কর হতে পারে। আমি সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে উত্তেজনা কমাতে এবং জাতিসংঘের সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনের অন্যান্য নিয়মের অধীনে তাদের বাধ্যবাধকতা বজায় রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। এই বিপজ্জনক সময়ে বিশৃঙ্খলার আবর্ত এড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সামরিক কোনো সমাধান নেই। সামনের একমাত্র পথ হলো কূটনীতি। একমাত্র আশা হলো শান্তি।’