দেশের প্রশ্নে সবাই এক

দেশের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও মর্যাদার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ঐক্যের আহ্বানে অংশ নেওয়া বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা ঐকমত্যের এই বার্তা দেন। তারা বলেছেন, বাংলাদেশকে দুর্বল ও নতজানু ভাবার কারণ নেই। সংলাপে সরকার ও অন্যান্য দলের সঙ্গে একমত পোষণ করে আবারও দ্রুত সংস্কার শেষে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। গতকাল বুধবার বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দেশের চলমান পরিস্থিতিতে ‘জাতীয় ঐক্য’ প্রতিষ্ঠায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার এই সংলাপ হয়।

বৈঠকে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা তাদের মধ্যে মতাদর্শের ভিন্নতা থাকলেও, সবাই দেশের প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রতিশ্রুতি দেন। এ সময় সুনির্দিষ্ট তিনটি বিষয়ে দলগুলোর কাছে প্রধান উপদেষ্টা মতামত চান। বিষয় তিনটি হলো ভারতসহ সারা বিশ্বে যে অপপ্রচার চলছে, সেগুলো নিয়ে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের করণীয়, আগরতলায় সহকারী হাইকমিশন ভাঙচুর ও পতাকা অবমাননা নিয়ে করণীয় এবং বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে বিশ্বব্যাপী ভারতের চালানো মিথ্যাচারের বিষয়ে মতামত। বিষয়গুলো আরও শক্তিশালীভাবে সরকারকে মোকাবিলার কথা বলেন নেতারা। এজন্য প্রবাসী বন্ধু ও অন্য বন্ধুরাষ্ট্রের সহযোগিতা নেওয়া এবং আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোকে ডেকে নিয়ে আসার পরামর্শ দেন তারা। পাশাপাশি সরকারের যোগাযোগ দক্ষতা ও আইনি দক্ষতা বাড়ানোর পরামর্শও এসেছে।

সূচনা বক্তব্যে বাংলাদেশের মুক্তি ও স্বাধীনতা অনেকের কাছে পছন্দ হচ্ছে না মন্তব্য করে প্রায় চার মাস ধরে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব দেওয়া ড. ইউনূস বলেন, ‘নানাভাবে নানা গতিতে এটিকে উল্টে দেওয়ার চেষ্টা গত ৫ আগস্টের পর থেকে কতরকমভাবে যে এসেছে, সেটা আপনারা আমার চেয়ে ভালো জানেন। অভ্যুত্থান যাদের পছন্দ হয়নি, তারা। এটা মুছে দিতে তারা নতুন নতুন বেশে নতুনভাবে চেষ্টা করেই যাচ্ছে। এখন যে চেষ্টা চলছে, সেটার বিশেষ একটা রূপ আছে। সেজন্য বিশেষভাবে আপনাদের ডাকা।’

‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে, সেটি ধামাচাপা দিয়ে ‘আরেক বাংলাদেশের’ কাহিনি রচনার যে অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে, সেই কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা যে শুধু এক দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ আছে, তাও নয়। বিশেষ বিশেষ বড় বড় দেশের মধ্যে এটা ছড়িয়ে গেছে। আমাদের বিরাট অভ্যুত্থানটা তাদের পছন্দ হয়নি, তারা এটা মুছে দিতে চায়, আড়াল করতে চায়। এটাকে নতুন ভঙ্গিতে দুনিয়ার সামনে পেশ করতে চায়, যেন আমাদের এখানে ভয়ংকর কাণ্ড হয়ে গিয়েছে’ যোগ করেন ড. ইউনূস।

তিনি আরও বলেন, ‘সেটা মিথ্যা প্রমাণ করার জন্য আমাদের সবার এক জোট হতে হবে। এটা কোনো বিশেষ রাজনৈতিক মতবাদের কিছু না, জাতি হিসেবে আমাদের অস্তিত্বের বিষয়। তাদের শক্তি এত বেশি, নানা দিক থেকে তারা একটা কাল্পনিক বাংলাদেশ তৈরি করেছে দুনিয়ার সামনে। আমরা তাদের বলেছি, আসেন দেখে যান। এখানে কোনো বাধা নেই। কিন্তু তারা ওখান থেকে কল্পকাহিনি বানিয়ে যাচ্ছেন।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এখন আমাদের সারা দুনিয়াকে বলতে হবে আমরা এক। আমরা যে পেয়েছি, তা এক যোগে পেয়েছি। কোনো মতভেদের মধ্যে পাইনি। কাউকে ধাক্কাধাক্কি করে পাইনি। যারা আমাদের বুকের ওপর চেপেছিল, তাদের আমরা বের করে দিয়েছি। আমরা নিজেরাই উন্মুক্ত হয়েছি। সেই জিনিসটা সবার সামনে তুলে ধরা। কীভাবে তুলব, এ ব্যাপারে পরামর্শ সবাই মিলে যেন আমরা এটা করতে পারি। কারণ নতুন বাংলাদেশের যাত্রাপথে এটা একটা মস্তবড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, অস্তিত্বের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ জিনিস আমাদের মনের ভেতর যেটা আছে, সেটা সবার সামনে একত্র হয়ে বললে আমাদের শক্তি সমবেত শক্তি হিসেবে আসবে।’

রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের উদ্দেশে ড. ইউনূস বলেন, ‘জুলাই-আগস্টে যে ঐক্য নিয়ে আমরা শত্রুর মোকাবিলা করেছি, যেভাবে ছাত্র-জনতা গুলির সামনে বুক পেতে দিয়েছিল, সেই ঐক্যে কোথাও কোনো চিড় বা ফাটল ধরেনি। এ কথাটা বিশ^বাসীকে জানাতেই এখানে ডেকেছি আপনাদের। আমরা দুর্বলতা থেকে এখানে আসিনি। স্বৈরাচারকে বিদায়ের পর, জাতি এখনো সজাগ ও মজবুত রয়েছে। এ কথাটাই সবাইকে জানাতে চাই।’

প্রায় দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলা সংলাপে রাজনৈতিক দলের নেতারা বিভিন্ন বিষয়ে মতামত দেন। এতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন ছিলেন। অন্যদিকে দলের আমির শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধিদলে ছিলেন নায়েবে আমির মজিবুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ার ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম। বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব ইউনুস আহমাদ ও প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী ও সদস্য সচিব আখতার হোসেন এই সংলাপে অংশ নেন।

এ ছাড়া বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মো. শাহ আলম ও সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, জাতীয় পার্টির (জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) উপদেষ্টা খালেকুজ্জামান, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর ও সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু ও যুগ্ম আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বৈঠকে অংশ নেন।

সংলাপে আরও অংশ নেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) শহীদউদ্দিন মাহমুদ, জাসদের শরীফ নুরুল আম্বিয়া ও নাজমুল হক প্রধান, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের ফয়জুল হক লালা, জাতীয় জোটের এহসানুল হুদা, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত আবদুল কাইয়ুম, বিকল্প ধারা বাংলাদেশের (একাংশ) নুরুল আমিন ব্যাপারী, ভাসানী অনুসারী পরিষদের রফিকুল ইসলাম বাবলু, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মামুনুল হক, আবদুল বাসিত আজাদ ও জাহাঙ্গীর হোসেন, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের আবদুর রব ইউসুফী ও মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দি, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, খেলাফত আন্দোলনের মুফতি ফখরুল ইসলাম, গণ অধিকার পরিষদের (ফারুক) সদস্য সচিব ফারুক হাসান, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) ববি হাজ্জাজ, জাগপার (একাংশ) রাশেদ প্রধান, এনডিপির আবু তাহেরসহ আরও কিছু রাজনৈতিক দল ও জোটের নেতারা।

এই সংলাপে অংশ নেওয়ার জন্য এলডিপির প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল ( অব.) অলি আহমদ এবং মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদকে গত মঙ্গলবার রাতে দাওয়াত দেন উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। তবে গতকাল বেলা ৩টার পর সেখানে তারা গেলে অতিথি তালিকায় নাম না থাকায় বাসায় ফিরে যান। আদিলুর রহমান খান যোগাযোগ করলেও তারা আর অনুষ্ঠানে যোগ দেননি।

সংলাপ শেষে সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের জানান, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, অস্তিত্ব ও মর্যাদার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আজ (গতকাল) বুধবারের বৈঠকে উপস্থিত রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের মধ্যে রাজনৈতিক আদর্শের ভিন্নতা ছিল। তবে সবাই দেশের প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা বলেছেন।’

বৈঠকে ভারতে বাংলাদেশবিরোধী বিভিন্ন তৎপরতা, আগরতলায় সহকারী হাইকমিশনে হামলা, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে হস্তক্ষেপ ইত্যাদির তীব্র নিন্দা জানানো হয় বলে উল্লেখ করেন আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ‘বৈঠকে এসবের বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের পদক্ষেপ ও সাহসী ভূমিকার প্রশংসা করা হয়েছে এবং সরকারের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করা হয়েছে। বৈঠকে ভারতের বিরুদ্ধে আরও শক্তিশালীভাবে সরকারকে বিষয়গুলো অ্যাড্রেস করার কথা বলা হয়েছে। এজন্য প্রবাসী বন্ধু ও অন্য বন্ধুরাষ্ট্রের সহযোগিতা নেওয়া এবং আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোকে ডেকে নিয়ে আসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সরকারের যোগাযোগ দক্ষতা ও আইনি দক্ষতা বাড়ানোর পরামর্শও এসেছে।’

আসিফ নজরুল বলেন, ‘বৈঠকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের হওয়া চুক্তিগুলো প্রকাশ করা এবং রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ দেশের জন্য ক্ষতিকর চুক্তি বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে। বাংলাদেশের প্রতি ভারতের যে অর্থনৈতিক নিপীড়ন, সাংস্কৃতিক আধিপত্যবাদের যে চেষ্টা, অভ্যন্তরীণ হস্তক্ষেপের যে চেষ্টা, সেটির নিন্দা জানান বৈঠকে উপস্থিত রাজনীতিবিদরা। পাশাপাশি তারা ভারতকে মর্যাদাশীল এবং সৎ প্রতিবেশীসুলভ আচরণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।’

আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘ভারত বাংলাদেশবিরোধী যে বিভিন্ন প্রচারণা চালাচ্ছে, সেই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব সম্প্রদায়ের মানুষের ভূমিকার প্রশংসা করা হয়েছে বৈঠকে। পাশাপাশি যেকোনো উসকানির মুখে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে। সবাই বলেছেন, আমাদের আর শক্তিহীন, দুর্বল ও নতজানু ভাবার কোনো অবকাশ নেই। যেকোনো ধরনের অপপ্রচার ও উসকানির বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব, সাহসী থাকব।’

বৈঠকে সবাই মিলে একটি সমাবেশ করা এবং নিরাপত্তা কাউন্সিল করাসহ বিভিন্ন প্রস্তাব এসেছে বলে জানান আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ‘সভার মূল সুর ছিল, আমাদের মধ্যে মত, পথ ও আদর্শের ভিন্নতা থাকতে পারে, অবস্থানে ভিন্নতা থাকতে পারে; কিন্তু দেশ, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে সবাই এক। সবার ওপরে দেশ। রাজনৈতিক সমাবেশের মাধ্যমে এই বার্তা জানিয়ে দিতে বলা হয়েছে।’

বৈঠক শেষে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এ সরকার ওয়াদাবদ্ধ জনগণের অধিকারকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। তাই অতি দ্রুত সংস্কার সাধন করে নির্বাচনের জন্য একটি রোডম্যাপ দেওয়ার কথা বলেছি। রোডম্যাপ পেয়ে জনগণ যদি নির্বাচনমুখী হয়, তাহলে এখন যে ষড়যন্ত্র দেখছেন, এসব ষড়যন্ত্র আর কেউ করতে সাহস পাবে না।’ তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার ছাত্র-জনতার গণভোটের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাদের দায়িত্ব এ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। বিগত কথিত সরকার বিদেশে গিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। এখন যে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, তা বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার জন্য। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ঐকমত্য প্রকাশ করেছি। যেভাবে আগস্ট মাসে গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সরকারকে বিদায় করা হয়েছে এবং এখন তাদের যারা সহযোগিতা করছে, তাদের সবাইকে আমরা মোকাবিলা করব। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করার জন্য তিনি যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন। আজকে আমরা যারা রাজনৈতিক দলগুলো এখানে ছিলাম তারা সবাই জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য একমত হয়েছি।’

বৈঠকে শেষে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘অপপ্রচার মোকাবিলায় সরকারের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামী কাজ করবে। আমরা কারও পাতা ফাঁদে পা দেব না। কারও কাছে মাথা নত করব না, আবার সীমালঙ্ঘনও করব না। দু-এক দিনের মধ্যে সুখবর পাবেন আশা করি।’

সরকারকে সহযোগিতা করছেন জানিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘দেশের সার্বভৌমত্বেও প্রশ্নে কোনো ছাড় নয়। সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে আমরা ঐক্যবদ্ধ। সরকার যাতে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেয়, সেটার জন্য আমরা সহযোগিতা করব। জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে বিজয় এসেছে, চলমান ষড়যন্ত্রও আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করব। দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে প্রোপাগান্ডার বিরুদ্ধে লড়তে হবে।’

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান ভারতের শাসক গোষ্ঠী মেনে নেয়নি। ফ্যাসিস্ট সরকারের পরাজয়কে ভারতের মোদি সরকার নিজেদের পরাজয় হিসেবে বিবেচনা করে আসছে। ফলে তারা ভয়ানকভাবে তৎপর রয়েছে। ভারতীয় উসকানিতে আমাদের জনগণ পা দেবে না।’

নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘নিজেদের মধ্যে রাজনৈতিক মতাদর্শের পার্থক্য থাকুক না কেন কিন্তু জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে সবাই ঐক্যবদ্ধ আছি। আমরা বাংলাদেশ স্বাধীনভাবে নিজেদের সম্মান নিয়ে বন্ধুত্বের সম্পর্ক নিয়ে বাঁচতে চাই। কারও কাছে মাথা নত করব না।’

গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘দেশের শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক দল, শ্রেণি-পেশার মানুষ, সিভিল সোসাইটি ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এক হয়ে লড়াই করবে।’

এর আগে গত মঙ্গলবার সংলাপের অংশ হিসেবে অধ্যাপক ইউনূস বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্র-নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। রাজনৈতিক দলগুলোর পর আজ বৃহস্পতিবার ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গেও বসবেন প্রধান উপদেষ্টা।