যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিল ইরান

যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিল ইরান

মঙ্গলবার সকালে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে কয়েক দফা হামলার চালানোর পর যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছে ইরান।

ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন প্রেস টিভির বরাত দিয়ে বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার (২৪ জুন) সকাল পৌনে ১১টার দিকে কাতারভিত্তিত সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ তথ্য জানিয়েছে।

ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন পর্দায় একটি গ্রাফিকের মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে। এতে বলা হয়েছে, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে।

ইসরায়েলে দফায় দফায় চলছে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা দেওয়ার পরেও ইসরায়েলে দফায় দফায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে ইরান।

মঙ্গলবার (২৪ জুন) বাংলাদেশ সময় সকাল পৌনে ১০ টার দিকে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, ইসরায়েলে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্রের ঝাঁক ছুড়েছে ইরান। সকাল থেকে এ নিয়ে ষষ্ঠ বারের মতো ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সাইরেন বাজছে ইসরায়েলজুড়ে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা ইরান থেকে আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্রের ঢেউ শনাক্ত করেছে এবং জনসাধারণকে আশ্রয় নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে এরই মধ্যে ইসরায়েলের বিয়ারশেবা শহরে তিনজন নিহত হয়েছেন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

ইসরায়েলি হামলায় ইরানি বিজ্ঞানী নিহত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি ঘোষণার মধ্যেই ইরানের রাজধানী তেহরানের বিভিন্ন জায়গায় স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ভোরের দিকে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।

 

ইরানের প্রেস টিভির খবর অনুসারে, তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় পারমাণবিক বিজ্ঞানী সেদিঘি সাবের নিহত হয়েছেন।

সংবাদমাধ্যটি জানিয়েছে, সাবেরের ওপর হামলাটি ইরানের রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে ফেরদৌসি ও ভালি আসরের প্রধান রাস্তার কাছে করা হয়েছিল।

এদিকে, ইসরায়েলি হামলার প্রতিক্রিয়ায় মঙ্গলবার সকাল ইসরায়েলজুড়ে তিন দফা ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান। টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, দক্ষিণ ইসরায়েলের বিয়ারশেবা শহরে ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে তিনজন নিহত হয়েছেন।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, ‘ইসরায়েল ও ইরান পুরোপুরি ও সর্বাত্মক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।’ নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল তিনি এই ঘোষণা দেন।

তবে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি বা সামরিক অভিযান বন্ধের বিষয়ে কোনো চুক্তি হয়নি। তিনি বলেন, ‘তবে ইসরায়েল যদি তেহরানের স্থানীয় সময় অনুযায়ী ভোর ৪টার মধ্যে ইরানি জনগণের বিরুদ্ধে তাদের অবৈধ হামলা বন্ধ করে, তাহলে আমরা আর পাল্টা হামলা চালিয়ে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা রাখি না।’

দক্ষিণ ইসরায়েলে আঘাত হেনেছে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র

মঙ্গলবার সকালে ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে দক্ষিণ ইসরায়েলের বিয়ারশেবা শহরে। খবর আল জাজিরার।

ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবার বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, বিয়ারশেবা শহরে ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে তিনজন নিহত হয়েছেন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন প্রায় ১০ জন।

আল জাজিরার সানাদ সংস্থা কর্তৃক যাচাইকৃত ঘটনাস্থলের ফুটেজে একটি বহুতল ভবন ও পার্ক করা গাড়িতে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। দূর থেকে তোলা অন্যান্য ফুটেজে আকাশে বিশাল ধোঁয়ার মেঘ দেখা গেছে।’

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকালে তিন দফায় ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরান।

ইরাকে তিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলা

ইরাকের ইমাম আলী, বালাদ ও তাজি সামরিক ঘাঁটিতে হামলা হয়েছে। পাশাপাশি বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে ড্রোন হামলার ঘটনাও ঘটেছে। মঙ্গলবার (২৪ জুন) স্থানীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

এই হামলাগুলো এমন এক সময়ে ঘটল, যখন পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইরান-ইসরায়েল বিরোধ ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

একজন সামরিক কর্মকর্তার বরাতে ইরাকের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম আইএনএর খবর বলছে, রাজধানী বাগদাদের উত্তরে তাজি সামরিক ঘাঁটিতে অজ্ঞাত ড্রোনের হামলা হয়েছে। তবে সেখানে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

কুর্দিস্তান২৪ চ্যানেল জানিয়েছে, বাগদাদের উত্তরে সালাহউদ্দিন প্রদেশের বালাদ সামরিক ঘাঁটিতেও বিস্ফোরণ হয়েছে। এই ঘাঁটি একসময় মার্কিন বাহিনীর জন্য দ্বিতীয় বৃহত্তম ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ইরানের বার্তাসংস্থা তাসনিম জানায়, ঘাঁটির অভ্যন্তরে দুটি বড় বিস্ফোরণ ঘটে। এই ঘাঁটিতেও হতাহত কিংবা ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা নেই। বাগদাদ থেকে ১০০ কিলোমিটার (প্রায় ৬২ মাইল) উত্তরে দেশটির সালাহউদ্দিন প্রদেশে এ সামরিক ঘাঁটির অবস্থান।

হামলা হয়েছে ইরাকের ইমাম আলি সামরিক ঘাঁটিতেও। বাগদাদভিত্তিক আল–সুমাইরা টিভি নেটওয়ার্কের খবর, এই সামরিক ঘাঁটির রাডার লক্ষ্য করে হামলা হয়েছে।

ইরানের তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে অবস্থিত ভিক্টরি বেজ কমপ্লেক্সে ড্রোন হামলার ঘটনা ঘটেছে। এখানে একসময় মার্কিন সেনারা ঘাঁটি স্থাপন করেছিল।

এসব হামলার ফলে ইরাকে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও এখনো কোনো পক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে এই হামলার দায় স্বীকার করেনি।

যুদ্ধবিরতির জন্য নেতানিয়াহুর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেছেন ট্রাম্প

হোয়াইট হাউজের একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার জন্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ইরানিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।

হোয়াইট হাউজ বলেছে, গত শনিবার ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন বোমা হামলা ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হতে সাহায্য করেছে এবং কাতার সরকার যুদ্ধবিরতি চুক্তি মধ্যস্থতা করতে সহায়তা করছে।

এদিকে, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি বা সামরিক অভিযান বন্ধের বিষয়ে কোনো চুক্তি হয়নি।

ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে: ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, ইসরায়েল ও ইরান সম্পূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতির প্রক্রিয়া ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধাপে ধাপে কার্যকর হবে এবং এই যুদ্ধ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হবে।

রয়টার্স ও আল জাজিরা ট্রাম্পের ট্রুথ সোশালে করা পোস্টের বরাতে এ খবর দিয়েছে। তবে ইরান বা ইসরায়েলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তাৎক্ষণিক কোনো বক্তব্য আসেনি।

ট্রাম্প এক বিবৃতিতে জানান, “ইসরায়েল ও ইরান পরস্পরের চলমান সামরিক অভিযান শেষ করে আগামী ৬ ঘণ্টার মধ্যে একটি প্রাথমিক যুদ্ধবিরতিতে যাবে। এই যুদ্ধবিরতি প্রথমে ১২ ঘণ্টার জন্য কার্যকর হবে। এরপর ২৪ ঘণ্টা পূর্ণ হলে যুদ্ধ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ বলে বিবেচিত হবে।”

তিনি আরো বলেন, “ইরান প্রথমে যুদ্ধবিরতি শুরু করবে এবং ১২ ঘণ্টা পরে ইসরায়েলও তাদের অভিযান বন্ধ করবে। একে একে দুই দেশই শান্তিপূর্ণ ও সম্মানজনক আচরণ করবে।”

ট্রাম্প এই সমঝোতাকে একটি বড় সাফল্য হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “এই ১২ দিনের যুদ্ধ কয়েক বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘাতে রূপ নিতে পারত, কিন্তু তা হয়নি এবং আর কখনোই হবে না।”

ট্রাম্পের দাবি অনুযায়ী, “এই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং অবশেষে দুই পক্ষকে একটি সমঝোতায় আনতে পেরেছে।”