গত ১৫-১৬ মার্চ অনুষ্ঠিত বিতর্কিত নির্বাচন নিয়ে প্রায় প্রতিদিন আওয়ামী ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের পাল্টাপাল্টি মিছিল-মিটিং হচ্ছে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণের সমিতি ভবনে।
বিক্ষোভের এক পর্যায়ে সম্পাদক দুলালের কক্ষের দরজা-জানালা ভাঙচুর করা হয়। তখন প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, হাতাহাতি। এতে কয়েকজন আইনজীবী আহত হয়েছেন বলে দাবি উভয় পক্ষের। এ ঘটনায় আওয়ামী ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা পরস্পর-পরস্পরকে দায়ী করছে।
হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় আওয়ামীপন্থী অন্তত পাঁচজন আইনজীবী আহত হয়েছেন বলে দাবি সম্পাদক আবদুন নূর দুলালের। অন্যদিকে বিএনপিপন্থী ছয়জন আইনজীবী আহত বলে দাবি বিএনপির আইন সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব কায়সার কামালের।
গঠনতন্ত্র অনুসারে সমিতির নির্বাচন হয়েছে দাবি করে দুলাল বলেন, ‘ভোটের আগের রাতে বিএনপির মাহবুব উদ্দিন খোকন ও রুহুল কুদ্দুস কাজল ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়েছিল। তাদের নির্বাচন করার মানসিকতা ছিল না। তারা নির্বাচনের আগের দিন থেকে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে সব কিছু করেছে। তারা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অপারেট করার চেষ্টাও করেছে। কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে। তাদের সমস্ত কিছু ব্যর্থ হয়েছে।’
কায়সার কামালের দাবি, মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও আব্দুন নূর দুলাল নির্বাচিত না হয়েও জবরদস্তি করে সভাপতি-সম্পাদকের কক্ষ দখল করে আছেন। আর তাদের পাহারা দিচ্ছে সাদা পোশাকের পুলিশ।
গত ৬ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ইফতার আয়োজনে ভাঙচুর, হাতাহাতি, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ইফতার আয়োজনের ব্যানার, চেয়ার, টেবিল ভাঙচুর করেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। এ ঘটনায় গত ৯ এপ্রিল সমিতির প্রশাসনিক কর্মকর্তা রবিউল হাসান শাহবাগ থানায় এ মামলা করেন। পরে ১০ এপ্রিল এ মামলায় হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নেন বিএনপিপন্থী ২৪ আইনজীবী।
এরপর গত ৩ মে ফের দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, হাতাহাতি, ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এতে আহত হন আতাউর রহমান নামের এক বয়োজ্যেষ্ঠ আইনজীবী। তিনি আওয়ামীপন্থী আইনজীবী হিসেবে পরিচিত।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের দুই দিন আগে গত ১৩ মার্চ মনসুরুল হক চৌধুরী নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটি থেকে পদত্যাগ করলে ভোটগ্রহণ নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। পরে নতুন আহ্বায়ক করাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে নির্বাচন পরিস্থিতি। গত ১৪ মার্চ সন্ধ্যায় দুই পক্ষই নির্বাচন পরিচালনা উপকমিটির আহ্বায়ক করা নিয়ে বিবাদে জড়ায়। পাল্টাপাল্টি স্লোগান, বিক্ষোভ মিছিলের এক পর্যায়ে হাতাহাতিতে জড়ান আওয়ামী ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। পরে আওয়ামীপন্থীরা জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. মনিরুজ্জামানকে আর বিএনপিপন্থীরা আইনজীবী এস এম মোকতার কবির খানকে আহ্বায়ক ঘোষণা করেন।
এ পরিস্থিতির মধ্যে পুলিশি প্রহরায় মো. মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন উপকমিটির অধীনে গত ১৫ ও ১৬ মার্চ ভোট হয়। নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পায় আওয়ামীপন্থী সাদা প্যানেল। এ নির্বাচন ও কমিটিকে শুরু থেকেই অস্বীকার করে আসছেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। এ নিয়ে বিক্ষোভ-প্রতিবাদের মধ্যে গত ৩০ মার্চ পাল্টা এডহক কমিটি ঘোষণা করা হয়। বিএনপিপন্থী আইনজীবীসহ বিভিন্ন পক্ষের আইনজীবীরা তলবি সভা করে এ কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদকে আহ্বায়ক এবং আইনজীবী শাহ আহমেদ বাদলকে সদস্যসচিব করা হয়। এ কমিটি আগামী ১৪-১৫ জুন সমিতির নতুন এই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে।