পটুয়াখালীর গলাচিপায় বিএনপির সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) সাবেক ভিপি ও গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর।সবশেষ প্রায় ৬ ঘণ্টা পর তাকে উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
উদ্ধারের পর এক পোস্টে নুর বলেন, ‘গলাচিপা-দশমিনার বিভিন্ন স্থানে গণঅধিকার পরিষদের অফিস ও নেতাকর্মীদের বাড়িঘর ভাঙচুর, হামলার প্রতিবাদে বিকেল ৩টা ৩০ মিনিটে গলাচিপা উপজেলা গণঅধিকার পরিষদের সংবাদ সম্মেলন ও ৪টায় বিক্ষোভ মিছিল।নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশনা আপনাদের আসার পথে সন্ত্রাসীরা হামলা করলে বা বাঁধা দিলে প্রতিহত করুন।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘২/১ জায়গায় প্রতিহত শুরু করুন দেখবেন ওরা পিছু হঠা শুরু করছে। নব্য চাঁদাবাজ, দখলবাজ, সন্ত্রাসীদের কোনো ছাড় নয়, এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা, উন্নয়নের স্বার্থে এদের রুখে দিন। ঐক্যবদ্ধ জনশক্তির কাছে সকল অপশক্তি হার মানে, জেগে উঠুন।’
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটার দিকে পুলিশ ও সেনা সদস্যরা নুরকে উদ্ধার করে গলাচিপা উপজেলা কমপ্লেক্সের ডাক বাংলোতে পৌঁছে দেয়।
গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ কৃষিবিদ শহিদুল ইসলাম ফাহিম বৃহস্পতিবার দিবাগত মধ্যরাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, রাত ৮টার দিকে বাজারে একটি আলোচনা সভা চলাকালীন অবরোধের ওই ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ রাত দেড়টা পর্যন্ত নুরের অবরুদ্ধ থাকার খবর পাওয়া যায়।
পরে রাত দেড়টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে নুর বলেন, ‘রাত পৌনে ১০টা থেকে ১টা ২৭ মিনিট পর্যন্ত এখনো অবরুদ্ধ। পুলিশ-সেনাবাহিনী এসে এখনো সন্ত্রাসীদের রাস্তা থেকে হঠাতে পারেনি। নির্বাচনে এই প্রশাসন কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দেবে?’
আরেক পোস্টে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি বলেন, ‘প্রশাসন যদি এখনই সন্ত্রাসীদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়ে, সুষ্ঠু নির্বাচন কীভাবে হবে আর মানুষের নিরাপত্তাই বা কোথায়? আমরা ভীতু নই, মৃত্যুকে পরোয়া করি না। দেশের তরে মৃত্যুকে সাথেই নিয়ে ঘুরি। আমাদের ভয় দেখিয়ে লাভ নাই।’
এর আগে এক বার্তায় গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য আবু হানিফ দাবি করেন, নুরকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে বিএনপি নেতা হাসান মামুনের অনুসারীরা।
তার দাবি, বৃহস্পতিবার রাত ১০টার পর থেকে গলাচিপা উপজেলার পাতাবুনিয়া বটতলা বাজারে বিএনপি নেতা হাসান মামুনের অনুসারীরা রাস্তায় গাছ ফেলে গুলতি, রড, রামদা নিয়ে আমাদের পথরোধ করেছে। ইতোমধ্যে স্থানীয় কয়েকজনকে মারধর করে দুটি মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করেছে। রাত ১১টার পরও পুলিশ সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি।
স্থানীয়রা জানান, ঘটনার পর পুরো বাজারজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ভাঙচুরের আশঙ্কায় দোকানপাট বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা। এই সংঘর্ষের পেছনে বাজারে দোকান বরাদ্দ (চান্দিনা ভিটি) নিয়ে দীর্ঘদিনের অসন্তোষ এবং রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব মূল কারণ বলে জানা গেছে।
জানতে চাইলে গলাচিপা উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন খান বলেন, ‘চর বিশ্বাসে বিএনপির নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের সভা করছিলেন। এ সময় ভিপি নুরের ছোটভাই আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে তারা সেখানে হামলা চালায় এবং বিএনপির নেতাকর্মীদের মারধর করেন। এতে তাদের ১০-১২ জন নেতাকর্মী আহত হয়। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’
এ ব্যাপারে গলাচিপা থানার ওসি মো. আসাদুর রহমান জানান, খবর পাওয়ার পর ঘটনাস্থল পুলিশ পাঠানো হয়েছে। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের ৫-৭ আহত হয়েছে খবর পাওয়া গেছে। সেখানকার পরিস্থিতি এখন শান্ত।