একদিন আগে বাবা হারানো আরিফুলের ৩টি গরুই বিক্রি

বাবাকে দাফন করেই রাজধানীর বছিলা হাটে তিনটি গরু বিক্রি করতে নিয়ে গিয়েছিল রাজশাহীর বাঘা উপজেলার নীচ পলাশী ফতেপুর গ্রামের নবম শ্রেণির ছাত্র আরিফুল ইসলাম।
প্রবাসী এক আত্মীয়ের নিকট থেকে টাকা ধার করে কোরবানির ঈদকে টার্গেট করে পদ্মার চরে ৩টি করে গরু পালন করেছিলেন ফতেপুর গ্রামের কোহিনূর শেখ। নবম শ্রেণি পড়ুয়া একমাত্র ছেলে আরিফুলকে সাথে নিয়ে আরো কয়েকজনের সাথে তিনটি গরু বিক্রির জন্য ট্রাকে করে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছিলেন।
গত ১ জুন রাত সোয়া একটার দিকে তাঁদের ট্রাকটি টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানার দেওহাটা এলাকায় থামানো হয়। এমন সময় একটি সবজিবোঝাই ট্রাক এসে ধাক্কা দেয়। এতে গরুর সাথে দাঁড়িয়ে থাকা কোহিনূর শেখ গুরুতর আহত হন। হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
সঙ্গে থাকা ব্যবসায়ীদের হাতে গরু রেখে বাবার লাশ নিয়ে রাজশাহী ফিরে যায় আরিফুল। লাশ দাফন করে, পরদিন আবার ঢাকায় ছুটতে হয় গরু তিনটি বিক্রির জন্য।
৪ জুন পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় রাজধানীর বছিলা হাটে গরু তিনটি বিক্রি করতে পারেনি আরিফুল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি ভাইরাল হলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার আগেই গরু তিনটি বিক্রি হয়ে যায়।
আরিফুলের গরু বিক্রির খবর জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক ছাত্র সাইয়েদ আব্দুল্লাহ। তিনি জানান, ফেসবুক পোস্ট দেখে কয়েকজন ক্রেতা যোগাযোগ করেছিলেন। আরিফের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছিলাম তাদের। এ রকম একজন ভদ্রলোক গিয়ে শেষ গরুটা কিনে নিয়েছেন। এর আগে বৃহস্পতিবার (৫ জুন) দুপুরে আরিফুলের দুটি গরু বিক্রি হয়ে যায়।
সাইয়েদ আব্দুল্লাহ জানান, আরো কয়েকজন আরিফুলের গরু কিনতে আগ্রহী ছিলেন। তাদের আন্তরিকতার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, পত্রিকা আর সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে এই ঘনঘোর বিপদের দিনে আরিফুলের ইস্যুটা যে কিছুটা অ্যাটেনশন পেল, তার দুঃখ আপনাদের হৃদয় স্পর্শ করে গেল এবং ছেলেটা এর মাধ্যমে কিছুটা উপকার পেল— এই কমিউনিকেশনগুলোই হলো সোশ্যাল মিডিয়ার টুকরো টুকরো উপকারী দিক।
আরিফুলের জন্য নেটিজেনদের মনটা বিষণ্ণ হয়ে ছিল দিনভর। সেটা সামাজিক মাধ্যমেই প্রকাশ পেয়েছিল। গরু বিক্রি হয়ে যাওয়ার খবরটা কিছুটা স্বস্তি দেবে তাদের।
সূত্র : কালের কণ্ঠ