হাঁটুতে ব্যথা, সিঁড়ি ভাঙতে গেলেই হাঁপিয়ে যাওয়া, একটু এদিক-ওদিক খেলেই বদহজম—বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের নানা জায়গায় সমস্যার ছাপ স্পষ্ট হতে থাকে। কারো চল্লিশ পেরোতেই ধরা পড়ছে ডায়াবেটিস, থাইরয়েড কিংবা রক্তচাপের সমস্যা, তো কারো পঞ্চাশে গিয়ে শুরু হচ্ছে বাতের যন্ত্রণা। অথচ আশি পেরিয়েও কেউ দিব্যি হাঁটাহাঁটি করছেন, ব্যথা-বেদনা যেন ধারেকাছেও নেই!
বিশেষজ্ঞদের মতে, শরীর দুর্বল হওয়াটা বয়সের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবে সঠিক পুষ্টি মিললে বয়সজনিত অনেক সমস্যা এড়ানো সম্ভব।
পুষ্টিবিদ ও ফিটনেস কোচ লিউক কুটিনহো, যিনি বহু বছর ধরে বয়স্কদের নিয়ে কাজ করছেন, জানাচ্ছেন, সুস্থ থাকতে কোনো দামি সাপ্লিমেন্ট নয়, বরং রান্নাঘরের পরিচিত দুটি উপাদান—সাদা ও কালো তিলই হতে পারে স্বাস্থ্যরক্ষার চাবিকাঠি।
কেন উপকারী সাদা ও কালো তিল?
সাদা ও কালো তিলে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন ও অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। যা শরীরকে নানা রোগ থেকে সুরক্ষা দেয়।
কী কী উপকারিতা মেলে?
হাড় মজবুত রাখে
তিলে থাকা ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ফসফরাস বয়সজনিত হাডড়ের ক্ষয় রোধে সহায়ক।
হাঁটু ও কোমরের ব্যথা থেকে মুক্তির জন্য নিয়মিত তিল খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন পুষ্টিবিদরা।
মস্তিষ্ক সচল রাখে
বয়স বাড়ার সঙ্গে স্মৃতিভ্রংশ, একাগ্রতা হ্রাসের মতো সমস্যা দেখা যায়। তিলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান স্মৃতিশক্তি ও মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
হজমে সহায়ক
ফাইবার সমৃদ্ধ তিল বদহজম, পেট ফাঁপা বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে কার্যকর।
পেট পরিষ্কার রাখে, অন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করে।
হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক
তিলে থাকা লিগন্যান্স, ফাইটোস্টেরল ও হেলদি ফ্যাট রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে
বিশেষ করে নারীদের জন্য উপকারী এই বীজ। রজোনিবৃত্তির আগে-পরে হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে তিলে থাকা ফাইটোইস্ট্রোজেন।
কিভাবে খাবেন?
সাদা ও কালো তিল সমপরিমাণে মিশিয়ে শুকনো অবস্থায় গুঁড়া করে নিতে হবে। ভেজে নিলে কিছু পুষ্টিগুণ নষ্ট হতে পারে। এই গুঁড়া স্মুদি, স্যুপ বা তরকারিতে মিশিয়ে সহজেই খাওয়া যায়। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে এই তিল কাঁচা হলুদের সঙ্গে বেটে ভাতের সঙ্গে খাওয়াও অত্যন্ত উপকারী।
যদিও তিলের পুষ্টিগুণ অনেক, তবে দিনে দুই চামচের বেশি খাওয়া ঠিক নয় বলে সতর্ক করেছেন পুষ্টিবিদরা। অতিরিক্ত খেলে হজমে সমস্যা হতে পারে।
জীবনভর সুস্থ থাকতে সুপারফুড নয়, প্রয়োজন সচেতনতা ও দৈনন্দিন খাদ্যে পুষ্টিকর উপাদানের সংযোজন। রান্নাঘরের সাধারণ এই দুই বীজই বয়সজনিত নানা অসুস্থতা থেকে দিতে পারে স্বস্তি—অর্থাৎ সাদা ও কালো তিলই হয়ে উঠতে পারে আপনার সুস্থতার নতুন সহচর।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা