মনের ক্ষত সারাতে এসব কাজ করতে পারেন

জীবনে আপনি যত খারাপ অনুভূতির সম্মুখীনই হোন না কেন, সব সময়ের জন্যই খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নিজেকে ভালোবাসা। অন্যের কথায় নিজেকে ছোট ভাবতে নেই। প্রত্যেক মানুষই অনন্য। নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখুন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিজের মনের ক্ষত আপনি নিজেই সারিয়ে তুলতে পারবেন।

কারণ বিশ্লেষণ

ঠিক কোন কারণে মনটা বেশি আহত হয়েছে, তা বুঝতে চেষ্টা করুন। আবেগের মুহূর্তে গোটা পৃথিবীকেই অন্য রকম দেখায়। ধীরেসুস্থে ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখুন কেন কষ্ট পাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রেই মনের ক্ষতের কারণ হয়ে দাঁড়ায় কেবল অন্যের তির্যক কথা। কারও কোনো কথা আপনার জীবনে বড়সড় প্রভাব ফেলছে কি না, তা ভেবে দেখুন। অবশ্যই মনে রাখবেন, চমৎকার সুন্দর এই পৃথিবী অনেক ক্ষেত্রেই নিষ্ঠুর আচরণ করতে পারে যে কারও সঙ্গে। অনেক মানুষ তাঁর ব্যক্তিগত রাগ-ক্ষোভ অন্যের ওপর প্রকাশ করে ফেলেন। যাঁর কারণে আপনি কষ্ট পেলেন, তিনি যদি আপনার আপনজন হয়ে থাকেন, তাঁর ওই আচরণের কারণ উপলব্ধি করতে চেষ্টা করুন। আর খুব কাছের কেউ না হলে অন্যের আচরণকে অতটা গুরুত্ব দিতে নেই।

ক্ষমা করুন, নিজেকেও

কাছের মানুষদের ক্ষমা করে দিন। তাতে আপনার নিজের মনের ক্ষত সারানো সহজ হবে। আবেগের বশে আপনি কারও সঙ্গে খারাপ আচরণ করে থাকলে সেটিও আপনার মন খারাপের কারণ হতে পারে। নিজের কৃতকর্মের জন্য নিজেকে ক্ষমা করুন। আপনজনের কাছে ছোট্ট একটি শব্দে দুঃখ প্রকাশ করলে তাতেও মনের আঘাত সামলানো সহজ হয়।

ভাবনাগুলো ভাগ করে নিন

কী কারণে কষ্ট পাচ্ছেন, তা নিয়ে আলাপ করতে পারেন খুব কাছের কোনো মানুষের সঙ্গে। যাঁর সঙ্গে সমস্যা হয়েছে, তাঁর সঙ্গেই আলোচনা করতে পারেন। সমাধানে আসতে পারেন। কিংবা ধরা যাক, অফিসে কোনো সমস্যা হয়েছে, যা নিয়ে আপনি অশান্তিতে আছেন। সে বিষয়ে জীবনসঙ্গীর সঙ্গে কথা বলতে পারেন। তাতে বিষয়টির সমাধান না হলেও আপনার মনের কষ্ট কমবে।

জগৎ হোক সুন্দর

নিজের যত্ন নিন। নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। বই পড়ুন। সৃজনশীল কাজে সময় দিন। শরীরচর্চা করুন। শ্বাসের ব্যায়াম করতে পারেন। শিথিলায়ন বা যোগব্যায়াম করতে পারেন। প্রার্থনায়, ধ্যানে মন শান্ত হয়। সুন্দর অতীতের কথা ভাবুন। ভাবুন নিজের সাফল্যের কথা। আর ভাবুন জীবনের সৌন্দর্যের কথা। নেতিবাচক ভাবনা মাথায় এলেও তা সরিয়ে দিন নিজের ইতিবাচকতার মাধ্যমে।

লিখুন নিজের কথা

  • এমন কিছু কথা থাকতে পারে, যা আপনি কাউকেই বলতে পারছেন না। সেসব নিজের মতো করে লিখে রাখুন কোথাও, যাতে অন্য কেউ না দেখতে পান। অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া কিংবা না নেওয়া যেকোনো কষ্টের কথা লেখার কাজটা ডায়েরির পাতা কিংবা ডিজিটাল স্ক্রিনে হতে পারে।
  • আলাদা একটা কাগজে মনের কষ্টের কথা লিখে তা পুড়িয়েও ফেলতে পারেন। ভাবতে চেষ্টা করুন, আপনার লিখে রাখা কষ্টগুলোর সঙ্গে মনের কষ্টও পুড়ে ছাই হয়ে গেল।
  • ছোট ছোট কার্ড বানিয়ে তাতে জীবনের ইতিবাচকতার কথা লিখে রাখুন। খারাপ লাগলে এই কার্ডগুলো বের করে দেখুন।

বিরতি নিন

সময়ের সঙ্গে অনেক ক্ষতের তীব্রতা কমে আসে। কখনো কখনো তাই বিরতি নিতে পারেন। যেমন অফিসে খুব বেশি খারাপ অনুভব করলে ছুটির আবেদন করতে পারেন। বিরতির সময়টা নিজের মতো করে উপভোগ করুন।

প্রত্যাশায় ছাড় দিন

নিজেকে এবং অন্যকে নিয়ে প্রত্যাশায় খানিকটা ছাড় দিন। বাস্তবতাকে মেনে নিন। উচ্চাকাঙ্ক্ষা থেকে হতাশা সৃষ্টি হতে পারে। বরং সুস্থ–স্বাভাবিক জীবনের জন্য কৃতজ্ঞ থাকুন। প্রত্যাশা কম থাকলে বারবার আঘাত পাবেন না। পুরোনো ক্ষত বারবার ফিরে আসবে না। জীবনের সবকিছু যে আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না, তা–ও মেনে নিন।