মৌলভীবাজারে স্কুলছাত্রী আনজুম’র হত্যাকারীর বিচারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল 

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার স্কুল শিক্ষার্থী নাফিসা জান্নাত আনজুম এর হত্যাকারীর বিচারের দাবিতে ছাত্র-জনতার আয়োজনে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসময় রাস্তা অবরোধ ও জেলা ও দায়রা জজ আদালত ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজেস্ট্রিট আদালতের সামনে অবস্থান কর্মসূচী পালন করা হয় ।
সোমবার (২৪ জুন) দুপুরে বেশ কয়েকটি গাড়িযোগে কুলাউড়ার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও এলাকা থেকে প্রায় দুই হাজার লোক মৌলভীবাজারের চাঁদনীঘাট থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জেলা দায়রা জজ ও সিজিএম এর কোর্টের সামনে এসে অবস্থান নিয়ে আনজুম হত্যার বিচারের দাবিতে বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকে। পরে তারা প্রেসক্লাব সন্মুখে এসে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে মিলিত হয়। এসময় বিক্ষোভকারীরা সড়ক অবরোধ করে রাস্তায় বসে পড়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এসময় আনজুমের সহপাঠিরা ও এলাকাবাসী জানান, আনজুমের খুনি জুনেলের বিচারের দাবীতে তারা রাজপথে নেমেছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত ফাঁসির রায় কার্জকর না হবে ততক্ষন পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। আর কোনও মেয়ে যেন নির্যাতনের শিকার হয়ে এভাবে মৃত্যুবরণ না করতে হয়। তারা এবিষয়ে প্রশাসনের সহযোগীতা কামনা করেন।
মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা, স্বরাস্ট্র উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। নিহতের পিতা আব্দুল খালিক তার মেয়ে হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানান। বক্তরা বলেন,মেয়েটিকে ধর্ষণ করে হত্যা করে খুনি জুনেল।
এসময় পিপি মো: আব্দুল মতিন, একাত্মতা জানিয়ে জানান, শাস্তি নিশ্চিত করতে তারা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাবেন।
১৯ জুন (বৃহস্পতিবার) সকালে মৌলভীবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ৫নং আমলি আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট আরিফ বিল্লাহ তারেকের খাস কামরায় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করার জন্য পুলিশ গ্রেফতারকৃত জুনেলকে হাজির করে। এসময় আসামী জুনেলের পক্ষে কোনো আইনজীবী আদালতে দাঁড়াননি। কিন্তু আসামী জুনেল বিজ্ঞ বিচারকের সামনে চাঞ্চল্যকর খুনের স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দী দেয়নি। এরআগে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে শিক্ষার্থী আনজুমকে সে কিভাবে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে তার স্বীকারোক্তি জবানবন্দী রেকর্ড রয়েছে পুলিশের কাছে।
উল্লেখ্য, গত ১৬ জুন দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছিল, কুলাউড়ায় শিক্ষার্থী আনজুম হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে। ওই ঘটনায় প্রতিবেশী জুনেল মিয়াকে (৩৯) আটক করা হয়েছে। নিহত আনজুমকে ধর্ষণ চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশ ছড়ায় ফেলে রাখেন ঘাতক জুনেল। আসামি জুনেলের দেখানো মতে এবং পুলিশের তল্লাশীকালে হত্যাকান্ডের আশেপাশে বিভিন্ন স্থানে ফেলে রাখা নিহত আনজুমের পরিহিত বোরকা, স্কুল ব্যাগ, বই ও একটি জুতা উদ্ধার করে পুলিশ।
নিহত আনজুম ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের শেরপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল খালিকের মেয়ে এবং স্থানীয় শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। আর ঘাতক জুনেল একই ইউনিয়নের দাউদপুর গ্রামের বাসিন্দা জাহির মিয়ার ছেলে। তিনি পেশায় দিনমজুর। তাঁর এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তান রয়েছে।
এদিকে শিক্ষার্থী আনজুম হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল সমগ্র কুলাউড়া। ঘাতক জুনেলের দ্রুত বিচারের দাবিতে প্রতিদিন একের পর এক মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে যাচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থী, স্থানীয় লোকজন ও যুবসমাজ। গত ১৫ জুন ঘাতক জুনেলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে এলাকাবাসী। ওইদিন রাতে স্থানীয় ব্রাহ্মণবাজারেও বিক্ষোভ মিছিল করে ঘাতকের ফাঁসি দাবি জানান এলাকাবাসী। পরদিন ১৬ জুন কুলাউড়া শহরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে ঘাতক জুনেলের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। এদিকে ১৮ জুন দুপুরে লংলা আধুনিক ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থীরা ঘাতক জুনেলের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন। ১৯ জুন দুপুরে মহতোছিন আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঘাতক জুনেলের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে এবং ভাটেরা স্টেশন বাজারে সচেতন যুব সমাজের ব্যানারে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। আন্দোলনকারীরা জানান, এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় যতক্ষণ না পর্যন্ত ঘাতক জুনেলের বিচার না হবে ততক্ষণ তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবে।