আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে গুমের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
আরো যাদের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি হয়েছে তারা হলেন—শেখ হাসিনার সাবেক প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ, সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান।
শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, “রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গুমের সংস্কৃতি চালু করে আওয়ামী লীগ। যারা গুম করতেন তাদেরকে পুরস্কৃত করা হতো। র্যাব, ডিবি, সিটিটিসি, ডিজিএফআই সবচেয়ে বেশি গুমের সঙ্গে জড়িত ছিল।”
পরে সাংবাদিকদের তাজুল ইসলাম জানান, বিগত ১৫ বছরে গুম ও ক্রসফায়ারের মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি ভয়ের সংস্কৃতি চালু করা হয়েছিল। হাজার হাজার মানুষকে সাদা পোশাকে কিংবা পোশাকধারী বিভিন্ন বাহিনী এসে তুলে নিয়ে যেত। এরপর তারা আর কোনোদিন ফিরে আসতো না, অধিকাংশই ফিরে আসেনি। কেউ কেউ ফিরে আসলেও তাদের সুনির্দিষ্ট কিছু মামলায় আটক দেখানো হয়েছে। আর কেউ স্বৈরশাসনের অবসানের পর ‘আয়নাঘর’ থেকে ফিরে এসেছেন।
তিনি বলেন, “গুমের সংস্কৃতির মাধ্যমে বছরের পর বছর ধরে মানুষকে নির্যাতন, হত্যাসহ তাদের সব ধরনের স্বাধীনতা বঞ্চিত করার যে অপরাধ, এটি আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত অপরাধ। সেই সঙ্গে এটি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনেও মানবতাবিরোধী অপরাধ। তাই আজকে পৃথক একটি মামলায় শেখ হাসিনাসহ ১১ জনকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন জানিয়েছিলাম। এরমধ্যে তার (শেখ হাসিনা) নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ছাড়াও বিভিন্ন সংস্থার ১১ জন রয়েছেন। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে ১১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।”
তিনি আরো বলেন, “আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি এ মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। ওই দিন আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। আর যদি এরমধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আসামিদের গ্রেপ্তারের অগ্রগতি প্রতিবেদন জামা দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
এর আগে গত ১৮ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্টাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ দায়ের করেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) নেতা মাইকেল চাকমা।
এছাড়া, গত ২৫ সেপ্টেম্বর সোহেল রানা নামে সুপ্রিম কোর্টের এক এক আইনজীবী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ছয় মাস গুম করে রাখার অভিযোগ আনেন। এ ঘটনার সঙ্গে শেখ হাসিনাসহ পাঁচ জনের জড়িত থাকার অভিযোগ করেন তিনি।