বিশ্ব ইজতেমা ও তাবলিগ জামাতকে ‘ধর্মীয় পর্যটন’ ঘোষণার দাবিতে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। সেইসঙ্গে রাজধানীর কাকরাইলে তাবলিগের মারকাজ মসজিদে সরকারি প্রশাসক নিয়োগেরও দাবি জানানো হয়েছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান ও কাকরাইলে তাবলীগের মারকাজ মসজিদের প্রধানকে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
রবিবার (৩০ জুলাই) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান এ নোটিশ পাঠান। নোটিশে বলা হয়েছে, সারা বিশ্বে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় মহাসমাবেশ হলো পবিত্র হজ। প্রতি বছর হজের নির্ধারিত সময় ছাড়াও সারা বছর বিশ্বের মুসলিমরা সৌদি আরবে ওমরাহ পালন করে থাকেন। হজ ও ওমরা থেকে সৌদি আরব বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করে থাকে। বিশ্বের অন্যতম সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৯ সালে এক বছরেই সৌদি আরব হজ ও ওমরাহ থেকে ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে; যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১১০ টাকা হিসাবে)।
‘কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই যে, বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যর্থতা, উপমহাদেশীয় ষড়যন্ত্র এবং কিছু ধর্মীয় নেতাদের পারস্পরিক হিংসাত্মক দ্বন্দ্বের কারণে বাংলাদেশে তাবলিগের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। যার কারণে বিশ্ব ইজতেমা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এতে করে সারা বিশ্বের মুসলিমদের কাছে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তা যাচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোর ব্যর্থতার কারণে বাংলাদেশ এই অপার সম্ভাবনাময় ‘ধর্মীয় পর্যটনের’ অর্থনৈতিক সু্যোগ কে কাজে লাগাতে পারছে না। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ প্রতিবছর কয়েক বিলিয়ন ডলারের আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং মুসলিম বিশ্বে শক্তিশালী প্রভাব অর্জন করতে ব্যর্থ হচ্ছে।’
নোটিশে আরও বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে এই ব্যাপক সম্ভাবনাময় ধর্মীয় পর্যটনে প্রধান বাধা সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের অদক্ষতা এবং কিছু ধর্মীয় নেতাদের হিংসাত্মক কার্যকলাপ ও মানসিকতা। বাংলাদেশের অধিকাংশ ধর্মীয় নেতা ও আলেমরা ধর্মচর্চার পরিবর্তে রাজনীতিতে বেশি আগ্রহী। বাংলাদেশের অধিকাংশ ধর্মীয় নেতা ও আলেমরা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়ার চেয়ে মানুষের কাছ থেকে উপহার, দান বাবদ অর্থ নিতেই বেশি আগ্রহী। এছাড়া অধিকাংশ মসজিদের ইমাম মানুষের কাছে ইসলাম ধর্মের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর বক্তৃতা বা বয়ান করার পরিবর্তে দান-খয়রাতের উপকারিতার ব্যাপারে বক্তৃতা বা বয়ান করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এভাবে আমাদের অর্থনীতিতে একটি দুষ্টচক্রের আবির্ভাব হয়েছে। অথচ সব নবী-রাসুলরা (সা.) নিজস্ব পেশা অবলম্বন করতেন এবং উপার্জন করতেন।’
বিশ্বের অন্যান্য দেশ তাদের পর্যটনকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখে উল্লেখ করে নোটিশে বলা হয়, ‘কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এই যে, বাংলাদেশে ধর্মীয় পর্যটনের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও এখানে ধ্বংসাত্মক রাজনীতি ঢুকে গেছে। বাংলাদেশে তাবলিগে ‘মাওলানা সাদ’ ও ‘মাওলানা জোবায়ের’ নামে দুইটি গ্রুপের সৃষ্টি হয়েছে। এই দুই গ্রুপের সদস্যের মধ্যে বিবাদ ও সংঘর্ষের মাধ্যমে বাংলাদেশে তাবলিগের কার্যক্রমের স্থবিরতা দেখা দিয়েছে এবং বিশ্ব ইজতেমা দুইভাগে বিভক্ত হয়ে গিয়েছে।’
তাই নোটিশ প্রাপ্তির পর এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।