মধ্য ইউরোপের দেশ পোল্যান্ডে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন ‘জাতীয়তাবাদী’ হিসেবে পরিচিত নেতা ক্যারল নওরোকি। দ্বিতীয় দফা ভোটের পর আজ সোমবার (২ জুন) তাকে বিজয়ী ঘোষণা করে ফল প্রকাশ করেছে দেশটির নির্বাচন কমিশন।
খবর রয়টার্সের। পোল্যান্ডের জাতীয় নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, রবিবার দ্বিতীয় দফা ভোটে কট্টর রক্ষণশীল ইউরো-সংশয়ী নেতা ক্যারল নওরোকি ৫০.৮৯ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী উদারপন্থি নেতা ওয়ারসোর মেয়র রাফাল ত্রজাস্কোস্কি ৪৯.১১ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। পোল্যান্ডের নির্বাচনের দিকে নজর ছিল প্রতিবেশি ইউক্রেনসহ রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নজুড়ে মানুষের। কারণ, এই নির্বাচনের ফল ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে পোল্যান্ডের সম্পর্কের গতিপথ নির্ধারণ করতে পারে। রয়টার্স বলছে, পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নওরোকির জয় দেশটির ইউরোপন্থি সরকারের সংস্কার এজেন্ডার উপর এক বড় ধাক্কা। ‘জাতীয়তাবাদী’ নওরোকি ইউরোপীয় ইউনিয়নের ব্যাপারে সন্দিহান এবং তার নীতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রক্ষণশীল রাজনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
গত মাসে হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তিনি বলেন, ট্রাম্প তাকে জানিয়েছেন- ‘তুমি জিতবে’। হোয়াইট হাউজের প্রকাশিত ছবিতে দু’জনকে থাম্বস আপ দিতে দেখা যায়। ৪২ বছর বয়সী নওরোকি একজন ইতিহাসবিদ এবং অপেশাদার বক্সার। তিনি একটি জাতীয় স্মৃতি ইনস্টিটিউট পরিচালনা করতেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি প্রতিবেশী ইউক্রেনের শরণার্থীসহ ইউরোপীয় অন্যান্য জাতিসত্ত্বার তুলনায় অর্থনৈতিক ও সামাজিক নীতিমালা পোল্যান্ডের পক্ষে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রচারণা চালিয়েছিলেন। ডানপন্থি ‘ল অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি’র নেতা নওরোকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ আন্দোলন দ্বারা অনুপ্রাণিত। নির্বাচনী প্রচারণায় তার স্লোগান ছিল ‘পোল্যান্ড ফার্স্ট, পোলিশ প্রায়োরিটি’। নাওরোকি নির্বাচনী প্রচারে বারবার বলেন, ‘সামাজিক সুবিধা পাবে পোল্যান্ডবাসী আগে’ এবং হাসপাতালে কিংবা ক্লিনিকে চিকিৎসার ক্ষেত্রে পোল্যান্ডের নাগরিকদের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।
এপ্রিলের এক প্রচারণায় তিনি বলেন, ‘সামাজিক সুবিধা হবে সর্বাগ্রে পোল্যান্ডবাসীর জন্য।’ মে মাসে তিনি ইউক্রেনের প্রতি পোল্যান্ডের সাহায্যের বিনিময়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করার অভিযোগ তোলেন এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে ‘দাম্ভিক’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ প্রার্থিতার বিরোধিতাও করেন। পোল্যান্ডে পার্লামেন্টের হাতে মূল ক্ষমতা থাকলেও প্রেসিডেন্ট ভেটো দেওয়ার অধিকার রাখেন- যা রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সেই হিসেবে কট্টর রক্ষণশীল নওরোকি তার পূর্বসূরী, প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ ডুডার নীতিগুলো অব্যাহত রাখবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। যার মধ্যে গর্ভপাতকে উদারীকরণ বা বিচার বিভাগ সংস্কারের জন্য সরকারের যেকোনো প্রচেষ্টাকে বাধা দেওয়া অন্তর্ভুক্ত। নওরোকিকে অভিনন্দন জানিয়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডুডা সামাজকি যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ এক পোস্টে লিখেছেন, “ধন্যবাদ! প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য। ভোটদানের জন্য। আপনার নাগরিক কর্তব্য পালনের জন্য। পোল্যান্ডের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য। বিজয়ীকে অভিনন্দন! পোল্যান্ডকে শক্তিশালী রাখুন!”