স্মৃতির গলে ফিরেছেন মুশফিক, কড়া নাড়ছে শততম টেস্ট

সমুদ্রতট ঘেঁষা গল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম—বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে যেন এক আবেগঘন অধ্যায়ের নাম। সেই ২০১৩ সালে এখানেই গাঁথা হয়েছিল লাল-সবুজের টেস্ট ক্রিকেটের সবচেয়ে গর্বিত স্মৃতি। ৬৩৮ রানের পাহাড়সম ইনিংসে প্রথমবারের মতো টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন মুশফিকুর রহিম। সময় কেটে গেছে এক যুগেরও বেশি। কিন্তু গলের সেই স্মৃতি আজও টাটকা।

এবার যখন মুশফিক ফিরলেন গলে, বয়স তাঁর ৩৮। তবে রোববার নেট সেশনে তাঁকে দেখে বয়সটা যেন অচেনা! উচ্ছ্বাসে ভরা, চনমনে এক মুশফিক—সেই পুরোনো চেনা রূপ। দলের দ্রুততম পেসার নাহিদ রানার বল সামলে লাফিয়ে উঠে উচ্ছ্বাস প্রকাশ, কাভার দিয়ে চিরচেনা স্টাইলের ড্রাইভ, হাসান মাহমুদের সঙ্গে ঠাট্টা-মশকরা, এমনকি দলের ‘জোফরা আর্চার’ খ্যাত থ্রোডাউন স্পেশালিস্ট রামজানের শরীর লক্ষ্য করে আসা বলও যেন থামাতে পারেনি মুশফিকের মনোবল। বরং প্রতি উত্তরে খেলেছেন দৃষ্টিনন্দন অফসাইড ড্রাইভ। এমন অনুশীলন দেখে গ্যালারির এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা সাংবাদিকরাও বিমোহিত।

তবে শুরুর সেই সোনালি অধ্যায় মনে করিয়ে দিলেও এবার মুশফিকের সামনে ভিন্ন চ্যালেঞ্জ। সামনে দাঁড়িয়ে তাঁর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ মাইলফলক—শততম টেস্ট ম্যাচ। নভেম্বরের ঘরের মাঠে আয়ারল্যান্ড সিরিজেই এই মাইলফলক ছোঁয়ার সম্ভাবনা। কিন্তু সেটা গলায় মালার মতো ঝুলে আসবে না—লড়াই করে অর্জন করতে হবে।

দলেরই এক সূত্র বলেছে, ‘শততম টেস্ট অবশ্যই বিরাট অর্জন হবে, কিন্তু সেটা পেতে হলে মুশফিককে রান করতে হবে। কেবল স্মৃতি দিয়ে জায়গা ধরে রাখা যাবে না।’

জাতীয় দলের হেড কোচ ফিল সিমন্স জানালেন, মুশফিকের ওপর বাড়তি প্রত্যাশার চাপ দিতে চান না, বরং তিনি চান, মাঠে উপভোগের সেই চেনা মেজাজেই থাকুন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার।

“আমি চাই, ও যেন খেলা উপভোগ করে। ২০১৩ সালের ইনিংসটা দেখার সময়ও ওকে খুব উপভোগ করতে দেখেছি। এবারও ওকে সেরকম খেলতে দেখতে চাই—অতিরিক্ত কিছু চাই না,” বলেছেন সিমন্স।

তবে বিষয়টা এতটা সরল নয়। দলে এখন উদীয়মান তরুণরা বেশ ভালো করেই চাপ সৃষ্টি করছেন। আমিত হাসান, মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনরা কড়া নাড়ছেন একাদশে ঢোকার দরজায়। এমন পরিস্থিতিতে শুধু অতীত স্মৃতিই যথেষ্ট নয়। এখনো নিয়মিত রান করতে হবে, প্রমাণ করতে হবে নিজের গুরুত্ব।

গল, যেখানে এক সময় শুরু হয়েছিল মুশফিকের কিংবদন্তি হয়ে ওঠার গল্প, এবার সেই গলেই তিনি শুরু করতে চান আরও একটি অধ্যায়। তবে সেই গল্প কত দূর যাবে, সেটি নির্ধারণ করবে ব্যাট হাতে বর্তমানের পারফরম্যান্স—নস্টালজিয়া নয়।